শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রসঙ্গ :ব্যাংক ঋণ

আপডেট : ২৪ জুন ২০১৯, ২১:৩২

 ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ লাখ ৩৮০ কোটি টাকা। আর ঘাটতির অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সরকার ব্যাংক থেকে এত বড় অঙ্কের ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কেননা ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট বিদ্যমান। এমতাবস্থায় যদি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার অধিক ঋণ নেয়, তাহলে এ সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। ব্যক্তি-বিনিয়োগকারীরা পর্যাপ্ত ঋণ নিতে পারবে না। এতে করে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৭১ শতাংশে। ঋণের এ হার গত ৫৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এমতাবস্থায় সরকার যদি ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উত্স হিসেবে এ খাতটিকেই বেছে নেয়, তাহলে ক্রমবর্ধমান সংকট আরো ভয়ংকর রূপ নিতে পারে।

নানা মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে যে, ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উেসর মধ্যে ব্যাংকের ওপর অধিক নির্ভরতা কতটুকু যৌক্তিক। খোদ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজেও বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করার জন্য একটি ব্যাংক কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বারবার সংশোধনের ফলে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখছে, যা দেওয়া হবে জনগণের করের টাকায়। আবার সেই দুর্বল ব্যাংক থেকেই ৪৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করি। সরকারের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি (৮ দশমিক ২ শতাংশ) অর্জন করতে হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। কারণ জিডিপিতে বেশি অবদান বেসরকারি খাতের। সেজন্য বেসরকারি খাতকে উত্সাহিত করা বেশি জরুরি। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে না আনলে টেকসই শিল্পায়ন সম্ভব নয়। সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ পেলে বিনিয়াগ আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করি।

বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার যদি দীর্ঘ মেয়াদে বেশি ঋণ নেয়, এতে করে জনগণের আমানতের অর্থ সরকারের কোষাগারে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে থাকবে। ফলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ-সক্ষমতা যেমন আটকে যাবে, পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির হিসাবে ব্যাংকের মূলধনও ক্ষয় হয়ে যাবে। আবার বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ঋণনির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে। এতে বেড়ে যাবে ঋণ পরিচর্চা ব্যয়; অর্থাত্ সুদব্যয়ে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে।

অবশ্যই প্রস্তাবিত বাজেটে নানা ইতিবাচক দিক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নানাবিধ প্রণোদনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেকারত্ব নিরসনে আলাদা তহবিল গঠন, এক অঙ্ক সুদে ঋণ বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এসব উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তবে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে এনে বিকল্প অর্থের সংস্থান বাড়াতে হবে এবং ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ সুগম হবে, যা সরকার-ঘোষিত বিভিন্ন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে মনে করি।

n লেখক :শিক্ষার্থী, বিবিএ অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়