বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষা

ব্যর্থতার মাঝেই লুকিয়ে থাকে সাফল্য

আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৯, ২০:৩৫

অজয় দাশগুপ্ত

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে। যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের জানাই অভিনন্দন। যারা পায়নি বা যারা পাশ করতে পারেনি তাদের কি আমরা ভুলে যাবো? আজকাল এমন হয়েছে সবকিছু শো আপের বিষয়। সামাজিক মাধ্যমের এই জোয়ারের কালে অভিভাবকেরাও পিছিয়ে নেই। এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা চলছে সর্বত্র। মানুন আর নাই মানুন আমরাও লেখাপড়া করেছি। আপনি জানেন অর্মত্য সেন কত মার্কস পেয়েছিলেন? জানেন কি বিদ্যাসাগর কেমন ছাত্র ছিলেন? বা সরদার ফজলুল করিমের জীবন? দেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তো ডক্টরেট ডিগ্রিই শেষ করেননি। সেটাও কি ব্যর্থতা না? কিন্তু তাঁর মতো বিদ্বান আর জ্ঞানতাপস দ্বিতীয় কেউ আছেন?

যা হচ্ছে তার নাম প্রতিযোগিতা। আমার এক পরিচিত স্কুল টিচার শিউলি। চট্টগ্রামে থাকেন। তিনি একটি লেখায় লিখেছেন কেন গেল বছর তার পুত্রের কৃতকার্যতার পরও তিনি ফেইসবুকে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ বড়ো মনোমুগ্ধকর। তিনি ও তার পুত্র  বিবেচনা করে দেখেছিলেন এতে তাদের পরিচিত যেসব তরুণ-তরুণী ভালো করতে পারেনি তাদের মনে দাগ লাগতে পারে। সেসব অভিভাবকেরাও কষ্ট পেতে পারেন। এতে অবশ্য তাদের আনন্দ বা সাফল্যের জয়যাত্রায় ভাটা পড়েনি। বরং আমার মনে হয়েছে এটাই তাদের গৌরব বাড়িয়েছে।

আমি এ কথা বলি না যারা পাশ করেছে বা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা আনন্দ করবে না। কিন্তু হুল্লোড় আর উল্লাসের আড়ালে যে বেদনা তাকেও বুঝতে হবে। তাদের জন্য আমাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তখনই বেশি দরকার। এটা কোমলমতি বাচ্চাদের জন্য আত্মঘাতী ব্যাপার। তারা মনের দুঃখে আত্মহননের মতো পথও বেছে নেয়। তখন আমরা হা-হুতাশ করি বটে অথচ ঠিক সময়ে সামাল দেই না। আমি এসব তরুণ-তরুণীদের বলি। দেখো এরা জীবনে কেমন প্রতিষ্ঠিত। এদের কেউ কেউ না থাকলে সমাজ-সংস্কৃতি-শিল্প-বিজ্ঞান থমকে যেতো অথচ এরা সবাই স্কুলে ব্যর্থ হয়েছিল। এখন কি আমরা একথা বলতে পারি না যে এরা তখন ব্যর্থ না হলে হয়তো দুনিয়া পালটে দিতে পারতেন না? এই তালিকায় বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন আছেন। যিনি না হলে সভ্যতা এগুতো না। আছেন এলভিস প্রিসলি। যাঁর গান না হলে মানুষ জাগতো না। স্টিফেন স্পেলবার্গের মতো ছায়াছবি নির্মাতা পরিচালক এখনো জন্মায়নি আর। তিনি আছেন এই দলে। ভিনসেনহত ভ্যান গঁগের নাম জানে না এমন মানুষ কজন আছেন? যিনি না হলে ছবির ভাষা শিল্পের ফর্ম তৈরি হতো না। তিনিও আছেন তোমাদের দলে। আছেন বিশ্বখ্যাত চার্লস ডারুইন। কে তিনি? যিনি আমাদের জানিয়েছেন মানুষের বিবর্তন। যার তত্ত্ব চমকে মুচড়ে নতুন করে ভাবিয়েছে মানুষকে।

এরপরও তোমরা দুঃখ করবে? না শোকে কাতর হয়ে কষ্ট আর এমন কিছু বেছে নেবে যা কারো কল্যাণ করে না। দেখো যারা আনন্দ করছে তারাও তোমার বন্ধু। তাদের আনন্দে আজ হয়তো শরীক হতে পারছো না। একদিন এমন দিন আসবে যেদিন তোমার জন্য তারা শুধু আনন্দ করবে না গর্বে বুক ফুলিয়ে বলবে এ আমার বন্ধু। সাকিব আল হাসান বা মাশরাফির কি খুব ভালো ফলাফল ছিল? তাদের মতো করে কে বাংলাদেশকে বড়ো করেছে দুনিয়ায়? আমি তোমাদের দলের একজন। আমি জানি এই ব্যর্থতা কত ভয়ংকর। আবার কতটা আশা জাগানিয়া।

আশা জাগানিয়া এই কারণে মানুষ এমন এক জীব যে ঘুরে দাঁড়াতে জানে। যা আর কেউ পারে না। মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। তোমরা একদিন হয়তো এমন কিছু করবে, করে দেখাবে যাতে সবাই চমকে যাবে। সে কারণেই হয়তো এবার পারোনি। মনে রাখা দরকার একটি ছোটো জোনাকিও একা অন্ধকার দূর করতে জানে। তাহলে তোমরা কেন পারবে না? তোমরাই পারবে।

n লেখক :সিডনি প্রবাসী লেখক