শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৩২

খাদিজা তুল কোবরা

প্রতিটি পরিবারে লেখাপড়ার অংশ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করা হয়। ঘুম থেকে উঠে স্কুল, স্কুল থেকে ফিরে কোচিং, প্রাইভেট এসবই যেনো দৈনন্দিন রুটিন। বাচ্চাদের স্কুল থেকে ফিরে কিছুটা সময়ের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া, এটা অনেকের চোখে ভালো লাগে না। তাই তারা ভাবে ছেলেটি যেনো পাড়ার মধ্যে দুষ্টছেলে নাম লিখিয়েছে। বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও যেনো এভাবে ভাবতে শুরু করে। লেখাপড়াই যেনো তার প্রধান এবং অন্যতম কাজ। অনেকেই হয়তো ভাবে তার সন্তানকে বাহিরের পরিবেশ থেকে যতটা আলাদা রাখা যায় ততটাই মঙ্গল।

অথবা অবসর সময়ে সে বাসার মধ্যেই ভিডিওগেমস, টিভি বা গল্পের বই পড়েই সময় কাটাবে। পরিবারের কথা মতো বাধ্য হয়ে শিশুটিও সেভাবেই নিজেকে তৈরি করতে শুরু করে। এটাই তার প্রাত্যহিক রুটিন এবং এভাবেই সেও অভ্যস্ত হতে থাকে।

কিন্তু পড়াশুনার পাশাপাশি একটি ছেলে বা মেয়ের কিছু এক্টিভেটিস থাকে, শুধুমাত্রই পড়াশুনার গণ্ডিতে থাকতে থাকতে তারা এই দম বদ্ধকর পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করে। কিন্তু আসলেই কি সে এসব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে?

অবশ্যই না। বরং নিজেদের মধ্যে একপ্রকার ভয় কাজ করে, আজ যদি বাইরে খেলতে যাই, ফিরে এসে নিশ্চিত বকা শুনতে হবে অথবা বাসা থেকে নিষেধ আছে ভেবেই শিশুটি পিছপা হয়। এভাবে একসময় ছেলে বা মেয়েটি ভুলে যায় খেলাধুলা তার জীবনের একটি অংশ। অতপর সে টেলিভিশন, ভিডিওগেমস, ফেসবুক, ইউটিউব এসবের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে ডিপ্রেশন, ইরিটেশন, মিসগিভিং বিষয়গুলো তার মধ্যে চেপে বসে। এর ভয়াবহতা অনেক সময় মাদকের পর্যায়েও যেতে পারে। রাগ, অভিমান, খিটখিটে মেজাজ, পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কিংবা উদ্ভট আচরণেরও উত্পত্তি ঘটতে পারে।

সর্বদা শাসন, বারণ ও নিয়মের মধ্যে থাকার ফলে তার মধ্যে একঘেয়েমি ভাব চলে আসে, পরিণতি হিসেবে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে, একপর্যায়ে অসুস্থও হয়ে যেতে পারে।

তাছাড়া একটা বয়সে এসে বালকবালিকাদের শারীরিক গঠন ও কাঠামোতে বিশেষ পরিবর্তন আসে। এ সময়ে খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের শরীর গঠনের যথেষ্ট সুযোগ পায়, আর তাদের এ শরীর গঠনে খেলাধুলা যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

যে শিশুটির পুতুলখেলার বয়স তাকে পুতুলখেলতে না দিয়ে যদি বাবা-মায়ের সঙ্গে টিভিসেটের সামনে বসিয়ে রাখা হয় তবে তার কথাবার্তা বা আচরণে বয়স্কদের আচরণের প্রতিফলন ঘটাটাই স্বাভাবিক। উল্লেখিত বিষয়গুলো এড়াতে এবং শিশুদের মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি সুপ্ত প্রতিভাগুলোর বিকাশ, মানসিক উন্নয়ন, শৃঙ্খলা শিক্ষা এবং শরীর স্বাস্থ্যের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা শিশুদের বিনোদনের অংশ হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে তার পরিবারকে।

n লেখক :শিক্ষার্থী, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ