মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাত্রজীবন হোক লোভ লালসামুক্ত

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ২১:২০

সাইফুল ইসলাম হাফিজ

লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু এই চির সত্য কথাটা আমরা প্রায় সবাই-ই জানি। কিন্তু এর মর্মার্থ অনুধাবন করে কতজনে জীবনকে সাজাতে পারি? খুবই অল্প কয়েকজন। কিন্তু বেশিরভাগ লোক কেন পারে না? কারণ তারা তরুণ বয়সে, ছাত্রজীবনে যে অভ্যাস গড়ে তুলেছে, কর্মজীবনে সে অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারছে না। ছাত্রজীবন হলো শেখার জীবন, চরিত্র গঠন করার উপযুক্ত সময়। কিন্তু এই জীবনেই যদি আমরা লোভ লালসার ফাঁদে পড়ে জীবনকে নষ্ট করে ফেলি তবে প্রত্যাশিত সমাজকে আমরা কী দিব? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের কাছ থেকে কী শিখবে? ইদানীং একটা চিত্র বারবার চোখে পড়ছে, কোনো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা কয়েকজন শিক্ষার্থীর ছবি একাধিক কোচিংয়ের পোস্টারে, ব্যানারে, লিফলেটে দৃশ্যমান। ছবি, নাম ছাপা হওয়ার পর তারা বেশ আহ্লাদিত, আবেগাপ্লুত হয়। অনেকে আবার লিখিত প্রমাণ, মৌখিক সাক্ষাত্কারও দিয়ে থাকে।

মনে প্রশ্ন জাগে যে, এই ভাই, আপু কয়টা কোচিংয়ে ক্লাস করছিল? ভালো ফলাফল করার পর ফুলের তোড়া, ল্যাপটপ, টাকার খামসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী সামনে আসলে তারা তাদের  আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিক্রি করে দেয় নিজের চরিত্রকে। অবলীলায় নষ্ট করে দেয় এই দেশ সেরা তীক্ষ প্রতিভার অধিকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে। তারা শিক্ষিত ঠিকই কিন্তু শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অর্জনে তারা অকৃতকার্য। ন্যূনতম মূল্যবোধ তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বেপরোয়া নেশায় তারা উন্মাদ। যার বলি হয় দেশসেরা প্রতিভাবান শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ, প্রকাণ্ড অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের মুক্ত যাত্রা ব্যাহত হয়।

 তাই ছাত্রজীবন থেকেই আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে যে আমাদেরকে কেউ যেন স্বার্থের জন্য ব্যবহার না করতে পারে। আমরা যেন টাকার কাছে আমাদের মেধা, সততা বিক্রি করে না দেই। এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরেকটা বিষয় বলা দরকার। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করে যথাযথ শিক্ষার্থীকে এই অর্থবৃত্তি প্রদান করার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় শিক্ষার্থী আছে, যারা পাওয়ার যোগ্য নয় কিংবা তাদের এই অর্থবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। তাদের অভিভাবকগণ তাদের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেওয়া সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঁচকলা দেখিয়ে গরিব শিক্ষার্থীদের অর্থে ভাগ বসায়।

ছাত্রজীবনে এই সামান্য কিছু  টাকার সামনে যদি আপনার লোভ সামলাতে না পারেন তবে কর্মজীবনে আপনার পেশায় কতটুকু সত্, নিষ্ঠাবান থাকবেন সেই প্রশ্নটা একবার নিজের কাছে করে দেখুন। তাই চরিত্র গঠন করার এই সোনালি সময়ে আমাদের উচিত হবে নিজের চরিত্রকেও সোনালি রঙে গড়ার। পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি আমাদের চরিত্রকে লোভ লালসার ভয়াল গ্রাস এবং যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখতে হবে। তাই আমরা যদি লোভ লালসা মুক্ত হয়ে, নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে পদার্পণ করি তবে ভবিষ্যতে জাতি আমাদের অফিসের ডেস্কের মধ্যে দেখবে না অবৈধ টাকার বাণ্ডিল, আমাদের হাতে চলবে না আর ক্যাসিনোনামক মেশিন। আমরাই গড়তে পারব দুর্নীতিমুক্ত একটি আলোকিত সমাজ।

n লেখক :শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।