মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুকুরের পাড়ে সবজি চাষ

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৮

আলোকপাত

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

পুকুরের পাড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল, ফল, গাছগাছড়া রোপণের সুযোগ থাকলেও সেখানে সারা বছর নানা রকমের মৌসুমি শাকসবজি উত্পাদন করা সম্ভব। তাতে জমির সদ্ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর পুষ্টির জোগানের বিষয়টি তো রয়েছেই। আগেই বলেছি বিশ্বে স্বাদু পানির মাছ উত্পাদনে বাংলাদেশ যেমন চতুর্থ, ঠিক তেমনি শাকসবজি উত্পাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়। তা ছাড়া আরেকটি পরিসংখ্যান আমার আজকের এ প্রবন্ধের সঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর সেটি হচ্ছে শাকসবজি আবাদের জমির পরিমাণ বৃদ্ধিসংক্রান্ত। অর্থাত্ বিশ্বে শাকসবজির জমির পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম। কাজেই পুকুরে মাছ চাষ এবং তার পাড়ে সবজি চাষের জায়গা বানানো সেই উদ্যোগেরই একটি অংশ।

  পুকুরের পাড়ে আসলে সারা বছরই কিছু না কিছু শাকসবজির আবাদ করা সম্ভব। তার মধ্যে কিছু থাকতে পারে স্থায়ী এবং কিছু হতে পারে মৌসুমি; সাংবাত্সরিক বা স্থায়ীগুলোর মধ্যে আনাজি কাঁচকলা, কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি। অপরদিকে মৌসুমিগুলোর মধ্যে লাউ, শিম, পটোল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শসা, করলা, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়শ, টম্যাটো, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কলমিশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি আলু শাক ইত্যাদি। মসলার মধ্যে আদা, হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা ইত্যাদি। ডালের মধ্যে রয়েছে খেসারি, মাষকলাই, মটর ইত্যাদি। এসব শাকসবজি কিংবা ডাল-মসলার সবগুলোই আবার শাকসবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

   এসব ফসলের এক বা একাধিক একই সঙ্গে অথবা সাথি বা আন্তফসল হিসেবে আবাদ করা সম্ভব। একটি ছোটো, বড়ো কিংবা মাঝারি আকারের পুকুরের পাড়ে সবজি ফলিয়ে পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। পুকুরের পাড়ে এসব সবজি চাষ করার জন্য খুব একটা জমি প্রস্তুতের প্রয়োজন হয় না। কোদাল কিংবা খুরপি দিয়েই পুকুরের পাড়ের জমি প্রস্তত করে নেওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে মাছ চাষের জন্য প্রতি বছর মাছ তুলে ফেলার পর পুকুর সাময়িক সংস্কার করার প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রতিবারেই পুকুর সংস্কারকালে নতুন মাটি ওঠানো হয়। সেই মাটি খুবই উর্বর হয়ে থাকে। কারণ মাছের খাবার হিসেবে যেসব জিনিস দেওয়া হয় সেগুলোর বেশির ভাগই পুকুরের তলানিতে জমা পড়ে। সেই তলানি নিচের মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে গাছের জন্য পুষ্টিকর জৈব সারে রূপ নেয়।

   অন্যদিকে নতুন খননকৃত পুকুরের মাটিও শাকসবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। নতুন মাটি অথবা সংস্কারকৃত পুকুরের জৈব সারযুক্ত মাটিতে অত্যন্ত ভালোভাবেই শাকসবজি উত্পাদন করা হয়ে থাকে। পুকুরের পাড়টিকে কয়েকটি ধাপে ভাগও করে নেওয়া যেতে পারে। তাতে একেক ভাগে একেকটি সবজি ফসল আবাদ করা যেতে পারে। আবার লাউ, শিম, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, পটোল, করলা, পুঁইশাক, ইত্যাদি পুকুরের পাড়ে সবজি চাষের ফলে সেখানে যথেষ্ট উঁচু থাকার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা কম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অপরদিকে সারা বছরই সেখান থেকে কিছু না কিছু শাকসবজি ফলানো সম্ভব। তাতে পারিবারিক সবজির চাহিদা মেটানো যায়। আমরা জানি, একজন সুস্থ স্বাভাবিক পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ গ্রাম শাকসবজি গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অবশ্যই শাকসবজি থেকে আসা বাঞ্ছনীয়। কাজেই মোট দেশজ শাকসবজির উত্পাদন বাড়ানোতে পুকুরের পাড়কে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আবাদের জমি দিন দিনই কমে যাচ্ছে। কাজেই এভাবে আবাদের ক্ষেত্র বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

n লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়