গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র জয়দেবপুরে ভাওয়াল রাজাদের তৈরি দেশের অন্যতম বৃহত্ রাজবাড়ি মাঠটি অবস্থিত। মাঠটি তৈরির পর থেকে এটি হয়ে ওঠে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার পাদপীঠ। একসময় এ মাঠে জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল খেলারও আয়োজন করা হতো। বিশাল আকৃতির সবুজ তৃণাচ্ছাদিত এ মাঠ দেখে অনেক দর্শনার্থী মুগ্ধ হতেন। প্রতিদিন বিকালবেলা মাঠটি খেলোয়াড় ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠত। কিন্তু মাঠটি বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা সংগঠনের জনসভা আয়োজনেই বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সেগুলো হচ্ছে মাঝেমধ্যে। কিন্তু মাঠের বিশাল জায়গা দখল করে চটপটি, ফুচকা বিক্রির কাজটি চলছে প্রতিদিনই।
প্রায় দেড়শ বছর আগে এ মাঠটি তৈরি হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। শুরু থেকেই মাঠটি রাজারাই তত্ত্বাবধান করতেন। পরে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় রাজবাড়িটি সেনা ছাউনি করায় এটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তায় সেনাবাহিনীর ওপর। সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে গাজীপুর মহকুমায় ও ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই এটি বর্তমানে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে রাজবাড়ি মাঠটি অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব হারাতে বসেছে। বিশাল আকৃতির এ মাঠের পশ্চিম প্রান্তের অনেকটা এলাকা দখল করে রাণী বিলাশ মণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া মাঠের আরো অংশ দখল করে বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়া হয়েছে। এতে মাঠের আয়তন অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
মাঠটির অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য এর চারদিকে লোহার বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে অপব্যবহার কমছে না। মাঠে ঘাসও অনেক কমে গেছে। বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমঞ্চ বা প্যান্ডেল তৈরির জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মাঠটি অসমতল হয়ে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে মাঠের পূর্বের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, মাঠের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও এর অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে অতি দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। মাঠটি যাতে প্রকৃতই খেলাধুলার কাজে ব্যবহার করা যায় তা-ও নিশ্চিত করা হবে।