শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শীর্ষ জঙ্গির সহযোগীর স্মার্ট টিভি উপহার নিয়ে তোলপাড়

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২০

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

রাজশাহীর ‘বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়’ ও ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর কমপ্লেক্সে’ বিতর্কিত ব্যক্তির ৪২ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন উপহার দেওয়া নিয়ে তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি স্থানীয় এমপি এনামুল হকের ঘনিষ্ঠ ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল স্মার্ট টিভিটি গ্রহণ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, স্মার্ট টিভি উপহার প্রদানকারী আব্দুল হালিম ২০০৪ সালে তত্কালীন সরকারের মদতে জেএমবির প্রকাশ্য অপারেশনে শীর্ষকমান্ডার, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। পরে বর্তমান সরকার আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যস্থতায় বাগমারায় সুদভিত্তিক এনজিও সংস্থা ‘আত-তিজারা লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন। অভিযুক্ত আব্দুল হালিম প্রতিষ্ঠানটির মালিক তথা চেয়ারম্যান। সম্প্রতি আব্দুল হালিম উপজেলার শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার পান। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে বিতর্কের রেশ না কাটতেই তার থেকেই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে নেওয়া হলো স্মার্ট টিভি। অভিযোগ উঠেছে ‘শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কারে’র পালটা ‘পুরস্কার হিসেবে’ স্থানীয় এমপি ও তার অনুসারীদের স্মার্ট টিভি উপহার দিয়েছেন আব্দুল হালিম।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০০৪ সালে তত্কালীন সরকারের মদতে বাগমারায় জঙ্গি বাংলাভাইয়ের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অভিযানে এই আব্দুুল হালিম সক্রিয় অংশ নেন। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ নির্যাতন ও হত্যাসহ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাভাই গ্রেফতার হলে আব্দুল হালিম নিজেকে রক্ষায় দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। পরে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড়ে ‘আত-তিজারা লিমিটেড’ গড়ে তোলেন।

জানা যায়, অভিযুক্ত আব্দুল হালিম নিজের ‘কলঙ্কিত ইতিহাস’ আড়াল করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকে নানা উপহার দিয়ে খুশি করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর কমপ্লেক্সে ঐ স্মার্ট টিভি উপহার দিয়েছেন।

বাগমারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সাহার আলী বলেন, এই আব্দুল হালিম প্রকাশ্যে বাংলাভাইয়ের সঙ্গে অভিযানে অংশ নিয়েছে। রাজশাহীতে তত্কালীন ডিসির সঙ্গে তার অফিসে বাংলাভাইয়ের পক্ষে প্রকাশ্যে বৈঠকও করেছে। এদের অনুপ্রবেশের কারণে আওয়ামী লীগ আজ নিন্দিত। এসব বিতর্কিত ব্যক্তি গোপনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজও করেছে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, ক্ষমতার বাইরে থাকার সময়ে আমরা ২২ বছর খেয়ে না খেয়ে আওয়ামী লীগ করেছি। আজ কী এমন ঘটেছে যে, একটি ঘৃণিত সংগঠনের ব্যক্তির থেকে উপহার নিতে হবে। তিনি বহুরূপী ও সর্বগ্রাসী কতিপয় নেতার সমালোচনা করে বলেন, গোটা বাংলাদেশ দিলেও তাদের ক্ষুধা কোনো দিন মিটবে না।’

তবে পৌর মেয়র আবদুল মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের জন্য খুশি হয়ে আব্দুল হালিম স্মার্ট টিভি দেওয়ায় তিনি সেটি নিয়েছেন। আব্দুল হালিম জেএমবির ও বাংলাভাইয়ের সহযোগী ছিলেন, তা জানতেন না বলেও দাবি করেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার আবুল বলেন, স্থানীয় এমপি এনামুল হক সমবায় মেলায় ‘আত-তিজারা’র স্টল পরিদর্শনের সময় আব্দুুল হালিম তাকে স্মার্ট টিভি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। হয়তো সেই টিভিটিই পৌর মেয়রের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত ‘আত-তিজারা’র চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, এবারের সমবায় দিবসের স্টলে স্মার্ট টিভিটি ছিল। স্টল পরিদর্শনে এসে এমপি এনামুল হক সেটি বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে লাগিয়ে দিতে বলেন। তাই তিনি টিভিটি উপহার দিয়েছেন। মতামতের জন্য এমপি এনামুল হকের মোবাইলে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।