শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বরগুনার চরাঞ্চলে শুঁটকি উত্পাদনে চলে হাজারো মানুষের জীবন

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৩২

সাগর উপকূলীয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলার চরাঞ্চলে প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হয়েছে শুঁটকি তৈরির কাজ। শুঁটকি তৈরির এ কর্মকাণ্ডকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে চর এলাকার প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষের। এখানকার শ্রমিকরা এখন শুঁটকি তৈরিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বরগুনার লালদিয়া, আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরের শুঁটকি পল্লিতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ ছয় মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় হাজার হাজার জেলে ও মত্স্যজীবীর আনাগোনায় মুখরিত থাকে এসব চর। সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর সমুদ্র থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে দেশের বৃহত্তম মত্স্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা (বিএফডিসি) ঘাটে ভিড়ছেন। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ কিনে শুঁটকি পল্লিতে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর ধুয়ে-মুছে কাটার পর শুঁটকির জন্য বাঁশের তৈরি মাঁচায় রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। কেউ বাছাই করছেন আবার কেউ শুকনো শুঁটকি মাছ বস্তায় ভরছেন।

প্রচলিত পদ্ধতিতে শুকানো এই শুঁটকি নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এখানে উত্পাদিত শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। এখানে প্রায় ২১ প্রজাতির মাছের শুঁটকি দেখা যায়। আহরিত মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—লইট্যা, বৈরাগী, ছুরি, ফাইস্যা, রইস্যা, পোয়া, কোরাল, মাইট্যা, রূপচাঁদা, ইলিশ, লাক্ষা, চিংড়ি, রাঙ্গাচকি, হাঙ্গর, রিটা, ফুটকা, কাঁকড়া, লবষ্টার, সামুদ্রিক শসা, হাঙ্গরের বাচ্চাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।

এছাড়াও এখানকার শুঁটকি পল্লির মাছের গুঁড়া সারাদেশে পোলট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

শুঁটকি শিল্পের মাধ্যমে অনেকের কর্মস্থান হলেও রয়েছে নানা সমস্যা। খোলা মাঠে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ধুলা-বালিতে শুঁটকি উত্পাদন, শুঁটকি সংরক্ষণে বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রণ, এমনকি বিষ মিশ্রিত করে শুঁটকি সংরক্ষণ করা, খাবার অনুপযোগী পঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করা, পুরো এলাকা জুড়ে মশা-মাছির উত্পাত বৃদ্ধি ইত্যাদি।

অন্যদিকে শুঁটকি উত্পাদনকারীরাও নানা সমস্যায় জর্জরিত। উপকূলজুড়ে শুঁটকি উত্পাদনের বিরাট সম্ভাবনা থাকলেও পদে পদে রয়েছে বাধা। পুঁজির অভাব, মহাজনদের শোষণ, সরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাব, মাছের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া অন্যতম। বর্ষার কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে এখানে শুঁটকি উত্পাদন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীত মৌসুমে। আর এ সময় এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজার হাজার শ্রমিক। যদিও শ্রমঘণ্টা ও বেতন নিয়ে রয়েছে তাদের নানা অভিযোগ।

এদিকে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর বাজারজাতকরণে বহুমুখী সমস্যার কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্পে আরো বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এ শিল্পে জীবিকা নির্বাহ হতে পারে বহু মানুষের। সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটা ও তালতলীতে রয়েছে এর অফুরন্ত সম্ভাবনা। কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার বন্ধ, স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি, বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরির প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এ খাতে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে শুঁটকি রপ্তানিতে অনায়াসে শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।