শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:২৪

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা বাদে গতকাল রবিবার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূতভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে উত্সবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

বান্দরবান: প্রার্থী, এজেন্ট ও ভোটাররা জানায়, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বান্দরবানের ১৭৬টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, বিএনপির সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। শহর মডেল প্রাইমারি ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কালাম বলেন, ভোট কেন্দ্রের বাহিরে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কমলেও ভোট গ্রহণ কখনো বন্ধ ছিল না। নৌকার প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণভাবেই সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমি পাইনি।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে ৪টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। হবিগঞ্জ-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ড. আহমদ আব্দুল কাদের ও  হবিগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসার আহমদ রূপক ভোট বর্জন করেছেন। হবিগঞ্জ-১ আসনের ঐক্যজোট প্রার্থী গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকেই ১৭৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫০টি কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ। প্রশাসন, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কেন্দ্রগুলো দখল হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ২টি কেন্দ্রে দখল করার সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স সামনে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হবিগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বানিয়াচঙ্গের দাসপাড়া কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট আবুল বাশার শোয়েবকে গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জ-৩ আসনে হবিগঞ্জ পৌরসভার নোয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টা চলে। পরে প্রশাসন ও যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই কেন্দ্র প্রায় ১ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে বলে জানান, প্রিসাইডিং অফিসার বেলায়েত হোসেন। তাছাড়া, হবিগঞ্জ-৪ আসনে চুনারুঘাট ও মাধবপুরে সবকটি কেন্দ্র দখল করে সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা জাল ভোট দিয়েছে বলে জানান ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তিনি ভোট বর্জন করেছেন বলে জানান।

খাগড়াছড়ি : জেলার নয়টি উপজেলার ১৮৭টি ভোট কেন্দ্রে দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বলতে গেলে শান্তির্পূণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। জেলার মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, রামগড়, পানছড়ি, ভাইবোনছড়া ভোটকেন্দ্রে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। মহালছড়িতে তিন বিএনপি কর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এদিকে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে খাগড়াছড়ি ২৯৮ আসনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া ফরহাদ। রিটার্নিং অফিসার ও  জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, বিচ্ছিন্ন দুই একটি ঘটনা ছাড়া কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, স্বতঃস্ফূর্ত ও উত্সবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কিছু অভিযোগ প্রার্থীদের কাছ থেকে পেয়েছি তা যথাযথ জায়গায় পাঠানো হয়েছে।

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর):বেলা সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ হামছাদী এলাকার পশ্চিম নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সভাপতি শেখ মিরসহ পাঁচজন আহত হয়। এ সময় পুলিশের লেগুনায় অগ্নিসংযোগ ও একটি ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টায় রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল রমিজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ, মধ্য বাঞ্চা নগর এন.আহাম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নারী-পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতির চিত্র ছিল ঠিক এমনটাই। শুধু এ তিনটি কেন্দ্রেই নয়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর ও সদর উপজেলার আংশিক নিয়ে ১৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৫০টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে নারী ও পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতির এমন বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। অন্য কেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষ কোনো ভোটারেরই তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। বেলা তিনটার দিকে গাইয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও ভোটারের উপস্থিতি কম। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এ কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা দুই হাজার ৩৫০ জন। বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। পাশের হায়দরগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার পুরুষ ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১২০-১৫০ ভোট পড়ছে।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দল মিলে ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল আলম জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কেন্দ্র সংখ্যা ১০৪, রাজনগর ৬৪, কুলাউড়া ৯৩, জুড়ী ৪১, বড়লেখা ৫৮, কমলগঞ্জ ৭২, শ্রীমঙ্গলে ৮০টিসহ মোট কেন্দ্র ৫১২টি এবং ভোট কক্ষ ২,৬০১টি। ৫১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৭৪টি সাধারণ, গুরুত্বপূর্ণ ১২৬টি, অতি গুরুত্বপূর্ণ ২১২ টিকে ধরা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার ৫১২ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২৬০১, পোলিং এজেন্ট ৫২০২ জনসহ মোট ৮৩৩৫ জন দ্বায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার ও পুলিশ মিলে ১৪ থেকে ১৬ জন দায়িত্ব পালন করেছে। এ ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ সদস্য রয়েছে ১৪০০ জন, র্যাব ৫৬ জন, বিজিবি ৪২০ জন, আনসার ৬১৪৪ জন ও সেনা সদস্য রয়েছেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন, জেলায় উত্সবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): সীতাকুণ্ডে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি প্রশাসনের। জানা যায়, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং পাহাড়তলী ও আকবর শাহ্ থানার আংশিক) আসন নিয়ে গঠিত। এতে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৮২টি কেন্দ্র ও মহানগরের ওই দুইটি থানার ২টি ওয়ার্ডে ২৬টি কেন্দ্র আছে। তবে নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই বলে মাঝপথ থেকেই ফিরিয়ে দেয় বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করে বলেন। তবে প্রশাসন বলছে, সবগুলো কেন্দ্রে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং বিপুল ভোটার সারিবদ্ধ হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে। এদিকে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোরসালিন বলেন, ১০৮টি কেন্দ্রের প্রতিটিতে ধানের শীষের এজেন্ট প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিএনপির সমর্থনকারী ও ভোটারদের বাধা প্রধান করা  হয়েছে। রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে আটক করে এবং পুলিশের উপস্থিতিতে রাতে ও সকালে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম): বাঁশখালীর ১১০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন ভোটাররা উত্সব আমেজে ভোট প্রদান করেছেন। পুকুরিয়া আনছারুল মাদ্রাসা কেন্দ্রের বাইরে দুই নৌকা সমর্থক প্রার্থীকে কোপানোর ঘটনা ছাড়া কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে প্রিসাইডিং অফিসার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোট কেন্দ্রে উত্সব আমেজ বিরাজ করলেও নৌকার সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল বেশি। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, বাঁশখালীর সর্বত্র সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

উখিয়া (কক্সবাজার): উখিয়ার ৪৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।  সরেজমিনে ভালুকিয়া, ফলিয়াপাড়া, দরগাহবিল, ডেইলপাড়া, কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টার আগেই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন ধরে অপেক্ষা করছে। তবে সেখানে প্রার্থী বা প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। ভালুকিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রায়হানুল ইসলাম মিয়া জানান, তার কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। এখানে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই। রাজাপালং ইউনিয়নের দরগাহবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে প্রার্থীদের কাউকে দেখা যায়নি। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলন কুমার বড়ুয়া জানান, তার কেন্দ্রে ৬টি বুথ করা হয়েছে। যাতে ভোটারদের ভোট প্রদান করতে কোন প্রকার জামেলা পোহাতে না হয়। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।