শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কমলগঞ্জে কমছে কৃষিজমি হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা!

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৯, ২১:৫৬

চা বাগান, বনাঞ্চল ও টিলাঘেরা সবুজের সমারোহে সাজানো কমলগঞ্জের ভূ-প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও কমলগঞ্জ উপজেলায় জমিতে আউস, আমন, সাইলসহ রবি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের চাষাবাদ হতো, সে জমিতে এখন নির্মাণ করা হয়েছে বাসাবাড়ি, আবাসিক, বাণিজ্যিক আর বহুতল ভবন। প্রতিবছর রাস্তার ধারে আবাদি কৃষিজমি ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বসতঘর, রাস্তাঘাট, দালানকোঠা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বর্তমানে কৃষিজমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি আর পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কৃষি ভান্ডার খ্যাত কমলগঞ্জে এক সময়ে প্রচুর খাদ্যশস্য উত্পাদন হতো। দু’ফসলি, তিন ফসলি ধান, রবি শস্য উত্পাদনে কৃষকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা দেখা যেতো। তবে কৃষিজমি রূপান্তরিত হয়ে এসব জমিতে এখন স্থান করে নিচ্ছে ইটের ঘর। কৃষিজমি  সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন কার্যকরের অভাবে আবাদি কৃষিজমি ধ্বংসের লাগামহীন প্রবণতা কোনো মতেই রোধ হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশ বাসাবাড়ি, দালান, অট্টালিকা নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে। এদের পঁচাত্তর ভাগই রাস্তার ধারের আবাদি কৃষিজমি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জে মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৭ হাজার ৩৫২ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ৭২৮ হেক্টর। এক ফসলি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ১৬১ হেক্টর, দুই ফসলি জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৫০১ হেক্টর, তিন ফসলি জমির পরিমাণ ২,৮৫৫ হেক্টর, আবাদ যোগ্য পতিত জমি ২৬ হেক্টর। কমলগঞ্জে প্রতি বছর দশমিক ২৫ শতাংশ বা ৪৫ হেক্টর পরিমাণ কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাত্ বছরে ৪৫ হেক্টর কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।

উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য মতে, ১৯৯৬ সালে এই উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৪৭.৬৮১ একর। ২০০৮ সালে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০.৪০৪ একর। ফলে গত এক যুগে ৭ দশমিক ২৭৭ একর আবাদি কৃষি জমি হারিয়ে গেছে। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে যে হারে আবাদি জমি ভরাট করে বাসাবাড়ি ও স্থাপনা তৈরি হচ্ছে তাতে ২০০৮ পরবর্তী ১০ বছরে বর্তমান সময় পর্যন্ত এর প্রায় দ্বিগুণ জমি ভরাট হয়েছে। মত্স্য অফিস সূত্র জানায়, ৯০ দশক পরবর্তী সময়ে উপজেলার নদী, হাওর, খাল-বিল, জলাশয় ও প্রাচীনতম পুকুরের এক চতুর্থাংশ বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় সমাজ কর্মী তোয়াবুর রহমান, কৃষক নেতা শহীদ সাগ্নিক জানান, চার-পাঁচ বছর আগেও কৃষিজমির পরিমাণ যা ছিল তা আবাসিক চাহিদা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা নদী ভাঙনে মারাত্মক হারে কমেছে। তারা বলেন, কৃষিজমিতে গৃহ নির্মাণে নীতিমালার অভাবে যে যেভাবে পারছে অট্টালিকা গড়ে তুলছেন। ফলে খাদ্য ঘাটতিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ে ভবিষ্যতে অশনিসংকেত দেখা দিবে।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মত্স্য কর্মকর্তা মো. আসাদ উল্ল্যা হাওর, বিল ও জলাশয় ভরাটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নব্বই দশকের পরবর্তী সময়ে কমলগঞ্জে হাওর, বিল, জলাশয়, নদী অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে এখন খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. শামছুদ্দীন আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসাবাড়ি নির্মাণ করার কথা। মানুষের সচেতনতার অভাব ও নীতিমালা কার্যকর না থাকায় কিছু সংখ্যক মানুষ প্রয়োজনে আবাদি কৃষিজমি ভরাট করে দালানকোঠা গড়ে তুলছে। তবে এসব বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতা কার্যক্রম চলছে।