বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিংগাইরে খেজুর গাছের বিশাল নার্সারি গড়ে তুলেছেন হালিম

আপডেট : ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০১

মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর গাছ এখন চাষ হচ্ছে  মানিকগঞ্জের সিংগাইরে। চার বছর ধরে উপজেলার ধল্লা শহীদ রফিক সেতুর পাশে নন্দিনী সিটিতে তিন বিঘা জমিতে খেজুর গাছের নার্সারি গড়ে তোলেন আব্দুল হালিম নামে এক ব্যক্তি। এই নার্সারির বদৌলতে তিনি এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী। তার এই নার্সারি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন মানুষ। ইন্টারনেট থেকে তিনি খেজুর গাছ চাষ করা শিখেছেন বলে জানা গেছে। এখন তার নার্সারিতে তিন জাতের ১০ হাজার খেজুর গাছের চারা রয়েছে যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। হালিম জানান, সৌদি আরবে আজুয়া, মরিয়ম ও বারহী নামে তিন জাতের খেজুরের গাছ হয় যেগুলো এখন তার বাগানেই আছে। বারহী এবং মরিয়ম জাতের এক কেজি খেজুর ৮শ থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হয়। তবে আজুয়া জাতের এক কেজি খেজুরের দাম  ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এই গাছ সৌদি আরবে ১০ হাজার বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে বলে জানা গেছে।

হালিমের দাবি, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে একমাত্র তিনিই এসব গাছের উত্পাদন এবং বাজারজাত করেন। তিনি জানান, প্রতিবছর  ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করি  বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। ওরিয়ন গ্রুপের কাছেই বেশি চারা বিক্রি করে থাকি। বছরে তার নার্সারিতে খরচ হয় ১৫ লাখ টাকার মতো। জাতীয় বৃক্ষ মেলায় হালিমের স্টল থেকেই মূলত পাইকাররা গাছ কিনে নেন। একটি খেজুর চারা বুনলে ১শটি গাছ হয়। বাঁশের মত গাছগুলো ছড়িয়ে যায়। যে কারণে একটি খেজুর চারার জন্য অনেকখানি জমির প্রয়োজন হয়। আবার খেজুর গাছের পাশাপশি সাথী ফসল হিসেবে ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করা যায়। সেগুলো থেকেও ভালো লাভ হয়। হালিম বলেন, খেজুর গাছের নার্সারি করে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। এজন্য নিতে পারেন প্রশিক্ষণ। ১শ চারা রোপণ করলে তা থেকে প্রায় ১ হাজার গাছ হয়। প্রতিটি চারার দাম গড়ে ২ হাজার টাকা হিসেবে ১ হাজার চারার দাম হয় ২০ লাখ টাকা। একটি বাড়িতে যদি কেউ ৫টি খেজুর গাছ বপণ করেন তাহলে তার পুষ্টি চাহিদাও মেটে এবং রোজগারেরও পথ হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে।  প্রতি কেজির দাম ৩শ টাকা হিসেবে বছরে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা খেজুর আমদানি করতে হয়। আব্দুল হালিম আরো জানান, তার বাগানে ২০ মাস বয়সী চারা রয়েছে। এগুলোর বয়স যখন ৪৮ থেকে ৬০ মাস বয়স হবে তখন ফল ধরবে। হালিম জানালেন তার সাফল্যের রহস্য। বললেন, গাছ রোপণের সময় গর্তের মধ্যেই যত কেরামতি। ৪ ফুট ব্যাসযুক্ত ৩ ফুট গর্তের মধ্যে সৌদি আরবের মাটির গুণাগুণ সমৃদ্ধ রাসায়নিক ও জৈব সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া স্থানটি রৌদ্রজ্জ্বল থাকতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহে ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

 উত্পাদন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গাছের মধ্য থেকে যে গাছ হয় তা হলো অফসুট। অর্থাত্ অফসুট থেকে অফসুট। ল্যাবরেটরির মাধ্যমে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে যেটি হয় সেটি টিসু কালচার। টিসু কালচার গাছের বা কোষ থেকে ল্যাবের মাধ্যমে চারা প্রস্তুত করতে হয়। এ ল্যাব বাংলাদেশে নেই। এমনকি দুবাই, ইউকে ও সৌদি আরব ছাড়া কোনো দেশেই এই ল্যাব নেই। আমরা দুবাই থেকে টিসু কালচার আমদানি করি। ট্যাক্সসহ সব খরচ দিয়ে প্রতি গাছে খরচ পড়ে ১১ হাজার টাকা আর বিক্রি করি ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। আমরা স্ত্রী গাছ আমদানি করি। তার সাথে একটি করে পুরুষ গাছ ফ্রি পেয়ে থাকি।