শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিংগাইরে সিসা কারখানার ধোঁয়া কেমিক্যালে হুমকিতে পরিবেশ

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৯, ২৩:৫৭

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামে নিউ থ্রি স্টার ব্যাটারি হাউজ নামক কারখানায় ব্যাটারি পুড়িয়ে চলছে সিসা উত্পাদনের কাজ। সিসার এই কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল ও কালো ধোঁয়া। বাতাসে ভাসছে সিসার ঝাঁজালো গন্ধ। ব্যাটারি রিসাইক্লিং করে তা থেকে নতুন ব্যাটারি উত্পাদন করছে সিসা তৈরির এই কারখানা, যে প্রক্রিয়াটি পরিবেশের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই কারখানা সম্পূর্ণ অবৈধ। এর কারণে আশপাশের মানুষসহ জীববৈচিত্র্য রয়েছে হুমকিতে। এখান দিয়ে হাঁটাচলা করলে দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের রোগবালাই। পোড়া ব্যাটারির বিষাক্ত কেমিক্যাল ঘাসের সঙ্গে মেশে আর সেই ঘাস খেয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি ছাগল মারা গেছে এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরো ১০-১২টি। কিন্তু কোনোভাবেই কারখানাটি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এলাকার বৃদ্ধা মেহেরজান জানান, ‘আমি বিধবা। ছাগল পালন করে কোনো রকমে বেঁচে আছি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই কারখানার কারণে আমার ১০টি ছাগলের মধ্যে পাঁচটিই মরে গেছে। বাকি পাঁচটির অবস্থাও মরার মতোই।’ মালো খাতুন জানান, একইভাবে তার এ পর্যন্ত ছয়টি ছাগল মারা গেছে। মুস্তাফিজুর রহমান খান মুকুল বলেন, কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের কারণে তারও তিনটি ছাগল মরে গেছে। অসুস্থগুলো হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এভাবেই ছাগল মরেছে গ্রামের ফারুক খানের একটি, জগা বেগমের দুটি, মহিমা খানমের একটি, বাবুল খানের একটি এবং রহিম খানের একটি। আলেয়া বেগম নামে এক নারী জানান, রাতের বেলায় যখন ব্যাটারির কারখানাটি চালু হয়, তখন ঐ রাস্তা দিয়ে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। এমনকি রাস্তার কুকুরগুলো পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গাছের পেয়ারা, আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ধল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার খাঁ বলেন, ‘এই কারখানা আমাদের খুবই ক্ষতি করছে। এলাকা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। গরু, ছাগল পালন করে আয়রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ এখানকার ইউপি চেয়ারম্যান এই সিসা কারখানার ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছেন। কী করে তিনি এটা দেন?’

লাইসেন্স দেওয়ার কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান জাহিদ ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার পরিষদের ইনকামের দরকার, তাই লাইসেন্স দিয়েছি।’

‘সব কাগজপত্র নেই, তবে আবেদন করা হয়েছে’—এ কথা জানিয়ে সিসা কারখানার মালিক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘কোনো সিসা কারখানার কারণে ছাগলের মৃত্যু হয়েছে কিংবা কারো ক্ষতি হয়েছে, এমন কথা কেউ বলতে পারবে না।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, জানতে পেরেছি, সিসা  কারখানাটির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই এবং এখানে ঘাস খেয়ে ছাগল মারা যাচ্ছে। শিগগির অভিযান চালিয়ে এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।