শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ

মানিকগঞ্জে মা ইলিশ নিধনে ‘মৌসুমি জেলেদের’ প্রস্তুতি!

আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:৩১

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সারাদেশে একযোগে মা ইলিশ মাছ ধরার ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে যা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বলবত্ থাকবে। আর এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, একশ্রেণির ‘মৌসুমি জেলে’ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

জানা গেছে, এসব জেলে এবং তাদের নিজ নিজ এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, সরকার দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মী, দৈনিক বেতনভোগী ২৫/৩০ জন তথ্য সরবরাহকারী ও কতিপয় অসাধু তথাকথিত সাংবাদিকের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মা ইলিশ নিধনের এক সমন্বিত সিন্ডিকেট। এই মৌসুমি জেলেরা সারা বছর নদীতে মাছ না ধরলেও নিষিদ্ধকালীন সময়ে এক-একজন ২/৩ লাখ টাকা কামানোর টার্গেট নিয়ে নদীতে নামে মা ইলিশ ধরতে। গত সপ্তাহখানেক যাবত্ পদ্মা-যমুনার কয়েকটি চরাঞ্চল সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ‘ইলিশ চোরদের’ এই সুবিশাল নেটওয়ার্ক ও মা ইলিশ নিধনে তাদের মহোত্সবের আয়োজনের কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানিকগঞ্জের শিবালয়, তেওতা, জাফরগঞ্জ, চরশিবালয়, গঙ্গা প্রসাদ, আলোকদিয়া, ত্রিসুন্ডি, চরকাটারী, বাচামারা, বাঘুটিয়া, মধ্যনগর, পাবনার কাজিরহাট, ঢালারচর, রাজবাড়ির চরদৌলতদিয়া ও কুশিয়াহাটাসহ নদী তীরবর্তী এলাকার শতাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাদের নিজ নিজ এলাকার ২০০/৩০০ মানুষ নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ নিধনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। প্রতিটি নৌকার মালিক ও ৫/৬ জন ভাগিদার এক সঙ্গে মা ইলিশ নিধন করার জন্য সর্বনিম্ন ৪ সেট করে কারেন্ট জাল কিনে রেখেছে। তারা জানে, অভিযানে তাদের ধরা হলে জাল পুড়িয়ে ফেলা হবে। তাই যাতে এক-দুই সেট জাল পোড়ালেও মা ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্যই এমন প্রস্তুতি নিয়েছে মৌসুমি জেলেরা। এসব কারেন্ট জাল চড়াদামে সংগ্রহ করা হয়েছে আরিচা ঘাট, জাফরগঞ্জ, দৌলতদিয়া ও কাজিরহাটের বেশ কয়েকটি দোকান থেকে। এসব দোকানদার মৌসুমি জেলেদের জাল পোড়ানো হলেও পুনরায় বাকিতে জাল সরবরাহ করতে রাজি। এর ফলে শুধু কারেন্ট জাল পুড়িয়েই ইলিশ নিধনযজ্ঞ বন্ধ করা যাবে না বলে সচেতন মহল মনে করছেন। অনেকে মনে করেন, মৌসুমি জেলেদের নৌকা জব্দ করা গেলে ইলিশ নিধনের হার কমানো সম্ভব হবে। অন্যথায় অভিযান করে তেমন সফলতা পাওয়া যাবে না। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব মৌসুমি ইলিশ নিধনকারীরা ঘাট এলাকার কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মীর সঙ্গে নৌকাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকার চুক্তি করে নদীতে নৌকা ভাসায় ইলিশ নিধনের জন্য। পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী নদীতে অভিযানে নামলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় বেশ কিছু তথ্য সরবরাহকারীকে। বিনিময়ে প্রত্যেককে ৭০০/৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এদের কাজ হলো নদী পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং ঘাট এলাকায় ইউএনওর নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মত্স্য বিভাগ, পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী নদীতে অভিযানে নামলেই মোবাইলে মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া। তারপরও যদি কোনো জেলে ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ধরা পড়ে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আছে সিন্ডিকেটের আর একদল লোক যারা আটকদের সবাইকে গরিব, অসহায়, দুস্থ, বৃদ্ধ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ছাত্র ইত্যাদি বলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। এতেও ব্যর্থ হলে কেবল ২/৩ হাজার টাকা জরিমানা অন্যথায় ৫/৭দিনের কারাদণ্ড দেওয়ার সুপারিশ করে থাকে সিন্ডিকেটভুক্ত দালালরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সফল হয়। যার ফলে প্রশাসনিক পর্যায়ে জোরদার অভিযান পরিচালিত হলেও মা ইলিশ রক্ষায় তেমন সফলতা আসে না। তাই অভিযানের সফলতা আনতে মৌসুমি মা ইলিশ নিধনকারীদের নৌকাগুলো এক মাসের জন্য জব্দ করার জোর দাবি জানিয়েছে অভিজ্ঞমহল এবং প্রকৃত মত্স্যজীবীরা।

এসব বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মত্স্য শিকারী এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে আরিচায় সচেতনতামূলক সভা এবং আলোকদিয়ার চরে পথ সভা করা হয়েছে। আরো দুই-তিনটি সভা করা হবে। চব্বিশ ঘণ্টা মোবাইল টিম কাজ করবে। মা           ইলিশ মাছ নিধনে কারো কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।

আড়াইহাজারে মেঘনায়  অভিযান,  ৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, আড়াইহাজারে মা ইলিশ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন, মত্স্য বিভাগ ও নৌ পুলিশ ফাঁড়ির যৌথ উদ্যোগে বুধবার মেঘনা নদীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোহাগ হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উজ্জল হোসেন, জেলা মত্স্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শওকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিশনন্দী থেকে শুরু করে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন। এ সময় ৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জেলেরা জাল রেখে পালিয়ে যায়। পরে জনসম্মুখে জালগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়।

দোহারে ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার দোহার উপজেলায় মা ইলিশ সংরক্ষণে পদ্মা নদীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার ভোর রাতে অভিযান পরিচালনা করেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা আক্তার রিবা। এসময় কাউকে আটক করা যায়নি।