শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি-২০২০

আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১০

বাংলা প্রথমপত্র

মোস্তাফিজুর রহমান লিটন

সিনিয়র শিক্ষক

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা

অভাগীর স্বর্গ

 

১.নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :                                                                     

“কুসুম বিধবা হইয়াছে। শুনিলাম, তাহার স্বামী বিদেশে চাকরি করিত; দুই-একদিন ছাড়া স্বামীর সহিত সাক্ষাতই হয় নাই। পত্রযোগে বৈধব্যের সংবাদ পাইয়া, আট বত্সর বয়সে মাথার সিঁদুর মুছিয়া, গায়ের গহনা ফেলিয়া, আবার তাহার দেশে সেই গঙ্গার ধারে ফিরিয়া আসিয়াছে।” ক. শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভাগ্যের সন্ধানে কোথায় গিয়েছিলেন?           ১

খ.‘ক্যাঙালী বাঁচলে আমার দুঃখু ঘুচবে’( কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লেখ। ২

গ.উদ্দীপকের কুসুমের সাথে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মায়ের অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।                                          ৩

ঘ.‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মায়ের বিদায় পাওয়ার অভিপ্রায় কুসুমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি? (উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।         ৪

ক.শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভাগ্যের সন্ধানে বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) গিয়েছিলেন।

খ. প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কাঙালীকে ঘিরে কাঙালীর মায়ের সুখের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে।

পৃথিবীর সব মা-ই তাঁর সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন সন্তান বড় হলে এবং বেঁচে থাকলে তাঁর আর কোনো দুঃখ থাকবে না। সন্তান বড় হয়ে তাঁর সব দুঃখ দূর করবে। কাঙালীর মাও কাঙালীকে নিয়ে এরকম স্বপ্ন দেখেছেন। কেননা, কাঙালীই ছিল তার একমাত্র অবলম্বন। তাই অভাগী কেবল কাঙালীর বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আর তাই দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তাকে অন্যরা সাধাসাধি করলে তিনি বলেছেন, ‘কাঙালী বাঁচলে আমার দুঃখু ঘুচবে’।

গ.উদ্দীপকের কুসুম বিধবা হলেও ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মা তা না হওয়ায় তাদের মধ্যে অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগী কখনো স্বামীর সান্নিধ্য পায়নি। সে বিধবা ছিল না। কিন্তু তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামী পরিত্যক্তা রমণী হিসেবেই তাকে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। উদ্দীপকের কুসুম অভাগীর অবস্থানে না থাকায় তাদের মাঝে অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য সহজেই বোঝা যায়। উদ্দীপকের কুসুম মাত্র আট বছর বয়সে বিধবা হয়েছে। সে গল্পের অভাগীর চেয়েও হতভাগ্য। বিদেশে চাকরিরত স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পত্রযোগে পেয়েছিল উদ্দীপকের কুসুম। বৈধব্যের সংবাদ পেয়ে সিঁদুর মুছে, গহনা ফেলে সে ফিরে এসেছে গঙ্গার ধারে। আর ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মা তথা অভাগী তার নামের সার্থকতা প্রমাণ করেছে। কেননা অভাগীর স্বামী তাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বউ নিয়ে সংসার পেতেছে অন্য গ্রামে। আর এদিকে অভাগী নিরন্তর একাকী সংগ্রাম করেছে শিশুপুত্র কাঙালীকে নিয়ে। যে স্বামী একবারও তার দিকে ফিরে তাকায়নি সে স্বামীর পদধূলিই কাঙালীর মা কামনা করে তার মৃত্যুশয্যায়। সধবা হওয়ায় স্বামীর আশীর্বাদসমেত স্বর্গে আরোহণের জন্যই কাঙালীর মায়ের এমন বাসনা জেগেছে। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের কুসুম স্বামীর প্রয়াণে বিধবা এবং ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মা সধবা। আর এখানেই তাদের অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. না, ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মায়ের বিদায় পাওয়ার অভিপ্রায় উদ্দীপকের বিধবা কুসুমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মা মৃত্যুশয্যায় স্বামীর পায়ের ধুলা এবং সধবার চিহ্ন নিয়ে শেষযাত্রা করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিল। কাঙালীর মায়ের তথা অভাগীর স্বামী জীবিত থাকায় তার এরূপ আশা করা যৌক্তিক। কিন্তু কাঙালীর মায়ের এমন ইচ্ছা উদ্দীপকের বিধবা কুসুমের ক্ষেত্রে খাটবে না। কেননা, তারা বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। উদ্দীপকের কুসুম বিধবা। উদ্দীপকের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিদেশে চাকরিরত স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পত্রযোগে জানতে পেরেছে কুসুম। এরপরই আট বছর বয়সী কুসুম সিঁদুর মুছে, গহনা ফেলে বিধবার বেশ ধারণ করেছে। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। তার স্বামী তাকে ছেড়ে অন্যত্র সংসার বাঁধলেও সে জীবিত থাকায় কাঙালীর মা সধবা। তাই মৃত্যুশয্যায় সে তার শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করে পুত্র কাঙালীর কাছে। শেষযাত্রায় সে তার স্বামীর আশীর্বাদ নিতে চায় এবং সধবার চিহ্নস্বরূপ আলতা এবং সিঁদুর নিয়ে স্বর্গগামী হওয়ার বাসনা জানায়। সধবা হওয়ায় কাঙালীর মা এমন ইচ্ছা পোষণ করতে পারলেও উদ্দীপকের কুসুমের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। কেননা, ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর মা সধবা হলেও উদ্দীপকের কুসুম বিধবা। সে আর মৃত স্বামীকে ফেরত পাবে না এবং পুনরায় সধবার পরিচ্ছদও পরিগ্রহ করতে পারবে না। উদ্দীপকের কুসুমের অবস্থান ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর একদম বিপরীতে। অভাগীর অভিপ্রায় তাই কুসুমের ক্ষেত্রে খাটবে না। অতএব, সার্বিক দিক বিবেচনা শেষে বলা যায় যে, ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সধবা কাঙালীর মায়ের শেষ বিদায় পাওয়ার অভিপ্রায় ছিল স্বামীর আশীর্বাদপ্রাপ্তি। স্বামী জীবিত ছিল বলেই অভাগী এমনটা প্রত্যাশা করতে পেরেছে যা উদ্দীপকের বিধবা কুসুমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।