বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক
হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, চাঁদপুর
মি.হ্যারি চাকরি সূত্রে বাংলাদেশে কর্মরত। রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হঠাত্ বিকট শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি লোকজনকে দিগ্বদিক ছোটাছুটি করতে দেখলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি কয়েকটি ছিন্ ্নবিচ্ছন্ন মৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখলেন।
ক) ইভটিজিং কী ? খ) সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায় ? গ) উদ্দীপকে মি.হ্যারির দেখা ঘটনাটির কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ) ‘উদার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চেতনাই উক্ত কার্যক্রম প্রতিরোধের রক্ষা কবচ’- বিশ্লেষণ করো।
ক) উত্তর : ইভটিজিং হচ্ছে লোকসমাগমপূর্ণ স্থানে পুরুষ কর্তৃক নারীদের নিগ্রহ ও উত্ত্যক্ত করা।
খ) উত্তর : যেকোনো সমাজের রীতিনীতি , মনোভাব এবং সমাজ স্বীকৃত আচার-আচরণের সমষ্টি হলো সামাজিক মূল্যবোধ। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ধ্যানধারণা ,বিশ্বাস , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য , সংকল্প মানুষের আচার-আচরণ এবং কার্যাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যে মানদণ্ড দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রিত হয় , তার সমষ্টিই হলো সামাজিক মূল্যবোধ। বড়দের শ্রদ্ধা করা , ছোটদের স্নেহ করা , অতিথির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি সামাজিক মূল্যবোধের উদাহরণ।
গ) উত্তর : উদ্দীপকে মি.হ্যারির দেখা ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বর্বরতম ঘটনা। ধারণা করা হয় , রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা হামলা করেছে ,যাতে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিল এটা ছিল মূলত তাদের পরিকল্পিত কাজ। জঙ্গিবাদী হামলার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় , ধর্মীয় বিধানের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এরূপ হামলার প্রতি উত্সাহিত করা হচ্ছে। যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষার অভাব , শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি , কারো কারো প্রতি বৈষম্য , দারিদ্র , রাজনৈতিকও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাবে এরূপ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও রাজনৈতিক দলসমূহের পরস্পরের প্রতি অনাস্থা ও হানাহানি এবং দোষারূপের সংস্কৃতির কারণেও এরূপ ঘটনা ঘটে থাকে। নৈতিকআদর্শ ও দেশপ্রেমের অভাবেও এধরনের ঘটনা ঘটে। আবার রাজনৈতিকভাবে দুবৃত্তায়নের কারণেও এসব ঘটনা ঘটতে পারে।
ঘ) উত্তর : উদ্দীপকে জঙ্গিবাদকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। জঙ্গিবাদের কারণগুলো ব্যাখ্যা করলে দেখা যায় , অসত্ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মের নামে নানা উগ্রবাদী চেতনা থেকেই মূলত এর উত্পত্তি। আর এক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষাকে আবেগ প্রবণ মানুষের সামনে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। ইসরাইলের ইহুদিরা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তারা জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের গুলি করে মারছে। তারা হত্যা করছে নারী ,শিশু ,কিশোর , যুবক , বৃদ্ধসহ আমজনতাকে। এমনিভাবে ধর্মীয় ইস্যুতে বসনিয়া হারজেগোভেনিয়াতে চালানো হয়েছিল ইতিহাসের বর্বরতম হামলা। হত্যা করা হয়েছিল কয়েক লক্ষ নারী-পুরুষ , শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। ধর্ষিত হয়েছিল হাজারও মা-বোন। আবার কোন বিশেষধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি দেশ ও সরকার ক্রমাগত বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাহলে তাদের মধ্যেও জঙ্গিবাদের উত্থ্যান ঘটতে পারে। তাই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন সকলের উদারধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষাদান। শিক্ষাব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রকৃত তথ্য সন্নিবেশ করতে হবে। কেউ যাতে ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত ইস্যুকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কাউকে বিভ্রান্ত করেতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক পক্ষকে এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। উক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় ,উদারধর্মীয় ও রাজনৈতিক চেতনাই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের রক্ষা কবচ।