শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নবম-দশম শ্রেণির সৃজনশীল প্রশ্ন

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ২০:১৩

বাংলা

মো. মিজানুর রহমান, সহকারি শিক্ষক (বাংলা),

গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়।

বঙ্গবাণী

শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজ আলোচনা করা হলো নবম- দশম শ্রেণির মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য বইয়ের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার নমুনা প্রশ্নোত্তর।

দৃশ্যকল্প -১ : ‘পরের মুখে শেখা বুলি পাখির মত কেন বলিস?

পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস?

দৃশ্যকল্প -২:‘প্রভাতফেরি প্রভাতফেরি

আমায় নেবে সঙ্গে

বাংলা আমার বচন,

আমি জন্মেছি এই বঙ্গে।’’

ক. সিফাত শব্দের অর্থ কি?

খ. ‘সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কি বা হিন্দুয়ানী’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

গ. ‘দৃশ্যকল্প -১ এ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে’ - ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘দৃশ্যকল্প -২ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মূল সুর একই’ বিশ্লেষণ করো।

নমুনা প্রশ্নোত্তর

ক. সিফাত শব্দের অর্থ গুণ।

খ. ‘সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন যে, সর্ব ভাষাই মহান প্রভু বুঝতে পারেন। সব ভাষা মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। কবি মনে করেন আরবি - ফারসি ভাষার আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই। কেননা সব ভাষার স্রষ্টাই তো তিনি। তাই ‘হিন্দুয়ানী’ তথা বাংলা ভাষায় ডাকলেও তিনি বুঝবেন, সাড়া দেবেন। কারণ, একমাত্র তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ এবং অন্তর্যামী।

গ. দৃশ্যকল্প - ১ এ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার প্রতিফলিত দিক হচ্ছে যারা স্বদেশ, মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতির অন্ধানুকরণ করে তাদের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করা। মাতা,মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি প্রতিটি মানুষের নিকট পরম শ্রদ্ধার বস্তু। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি তার সময়ে যারা নিজ দেশ, নিজভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি এমনকি আত্মপরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছিল। শেকড়হীন আত্মবিস্মৃত স্বভাবের এসব লোককে কবি তীব্র ঘৃণা করেছেন। চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন এরা নিজ দেশ ত্যাগ করে বিদেশে যায় না কেন? অপরদিকে দৃশ্যকল্প -১ এ যারা মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি পরিত্যাগ ও অবহেলা করে বিদেশী ভাষা ও ভিনদেশী সংস্কৃতি মনে-প্রাণে ধারণ বা অন্ধানুকরণ করে তাদের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

অতএব প্রতীয়মান হচ্ছে যে, দৃশ্যকল্প -১ এ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি হল মাতৃভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে বিদেশী ভাষা ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্ধানুকরণকারীদের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা।

ঘ. দৃশ্যকল্প -২ ও ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মূল সুর একই’’ - উক্তিটি যথার্থ। মাতৃভাষা সৃষ্টিকর্তার সেরা দান। মাতৃভাষার মাধ্যমে মানুষ যত সহজে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে বিদেশি ভাষায় তা সম্ভব হয় না । বঙ্গবাণী কবিতায় কবি মাতৃভাষার প্রতি তার গভীর প্রেম ও উপলব্ধির কথা ব্যক্ত করেছেন । যে কোনো ভাষায় তাকে ডাকা হোক না কেন তিনি সব ভাষাই বোঝেন এবং সাড়া দেন। কারণ তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ও অন্তর্যামী। দৃশ্যকল্প-২ এর প্রতিপাদ্য বিষয় ও স্বদেশ প্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন কবি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রভাতফেরিতে যেতে চান- যার মাধ্যমে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধেরই প্রকাশ ঘটেছে। বঙ্গবাণী কবিতায় কবি মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন ।

দৃশ্যকল্প-২ এর প্রতিপাদ্য স্বদেশপ্রেম ও মাতৃভাষার জন্য শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা দেখানো। বঙ্গবাণী কবিতা ও দৃশ্যকল্প- ২ দুটোতেই মাতৃভাষার প্রতি প্রেম ও মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। অতএব বলা যায়, ‘দৃশ্যকল্প -২ ও বঙ্গবাণী কবিতার মূল সুর একই।