জীববিজ্ঞান
মো.আসাদ- উজ্জামান , শিক্ষক
সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
রেচন
যে জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহে বিপাক ক্রিয়ায় উত্পন্ন তরল বর্জ্য পদার্থগুলো নিষ্কাশিত হয় তাকে রেচন বলে। রেচন মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়া। কোনো কারণে দেহে বর্জ্য পদার্থ সমূহ জমতে থাকলে নানা রকম অসুখ দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত পানি, লবণ, কার্বনডাইঅক্সাইড ও জৈব পদার্থগুলো সাধারণত দেহ থেকে রেচনের মাধ্যমে বাইরে বের করে দেয়া হয়।
রেচন পদার্থ
বিপাক ক্রিয়ায় উত্পন্ন নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থকে রেচন বলে। মানব দেহের রেচন পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে আসে। মূত্রের প্রায় ৯০ ভাগই পানি। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে-
১. ইউরিয়া ২. ইউরিক এসিড
৩. ক্রিয়েটিনিন ৪. অ্যামোনিয়া
বিভিন্ন ধরনের লবণ।
ইউরোক্রোম নামে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে মূত্রের রং হালকা হলুদ হয়। আমিষ জাতীয় খাদ্যের কারণে মূত্র অম্লীয় হয় এবং ফলমূল ও শাকসবজির কারণে মূত্র ক্ষারীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে।
বৃক্কের গঠন (Structure of Kidney) :
মানব দেহের প্রধান রেচন অঙ্গ হলো বৃক্ক। উদর গহবরের পেছনের অংশে মেরুদণ্ডের দুই পাশে দুইটি বৃক্ক অবস্থান করে। প্রতিটি বৃক্কের আকৃতি শিমের বিচির মতো, এর বাইরের দিক উত্তল এবং ভেতরের দিক অবতল। প্রতিটি বৃক্ক নিম্নলিখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত। যথা-
১। ক্যাপসুল : বৃক্ক এক ধরণের তন্তুময় আবরণে আবৃত, একে ক্যাপসুল বলে।
২। রক্তনালী : অক্সিজেন যুক্ত রক্ত বহনকারী বৃক্কীয় ধমনী বৃক্কে প্রবেশ করে এবং কার্বন-ডাইঅক্সাইড যুক্ত রক্ত বহনকারী শিরা বৃক্ক থেকে বের হয়ে যায়।
৩। কর্টেক্স ও মেডুলা : বৃক্কের ক্যাপসুল সংলগ্ন অংশকে কর্টেক্স এবং ভেতরের অংশকে মেডুলা বলে।
৪। হাইলাস ও পেলভিস : অবতল অংশের ভাঁজকে হাইলাস এবং প্রতিটি হাইলাসে পেলভিস নামক গহবর থাকে।
৫। ইউরেটার : পেলভিস থেকে ইউরেটার নামক দুটি নালিকা বের হয়ে মূত্র থলিতে প্রবেশ করে।
৬। পিরামিড : মেডুলায় ৮-১২ টি রেনাল পিরামিড থাকে, যা পিড়কা গঠন করে।
চিত্র : বৃক্কের লম্বচ্ছেদ
বৃক্কের কাজ:
মানব দেহের প্রধান রেচন অঙ্গ হলো বৃক্ক। উদর গহবরের পেছনে মেরুদণ্ডের দুইপাশে দুটি বৃক্ক অবস্থান করে। মূত্র উত্পাদন বৃক্কের প্রধান কাজ হলেও এটি আরো অনেক কাজে সম্পাদন করে। যথা-
রেচন বর্জ্য অপসারণ: বৃক্ক দেহ থেকে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্যপদার্থ অপসারণ করে।
দেহের পানি সাম্যতা রক্ষা: রক্তে পানির পরিমাণ বেশি হলে বৃক্ক বেশি মূত্র উত্পন্ন করে এবং রক্তে পানির পারিমাণ কম থাকলে কম মূত্র উত্পন্ন করে দেহে পানির সাম্যতা রক্ষা করে।
দেহের অভিস্রবন নিয়ন্ত্রণ: দেহের রক্ত ও কোষ কলার অভিস্রবনিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যান্য বস্তু অপসারণ: অতিরিক্ত ওষুধ, চিনি, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি বৃক্কের মাধ্যমে অপসারিত হয়।
লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: বৃক্ক দেহে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ইত্যাদি লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
নেফ্রন (Nephron) ঃ
বৃক্কের গঠন ও কার্যকরী একককে নেফ্রন বলে। মানব দেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন থাকে। প্রতিটি নেফ্রন প্রধানত দুটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথা-
১। ম্যালপিজিয়ান বডি।
২। বৃক্কীয় নালীকা।
ম্যালপিজিয়ান বডি : এটি বৃক্কের সম্মুখ অংশ। প্রতিটি ম্যালপিজিয়ান বডি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। যথা-
বোম্যান্স ক্যাপসুল : দুইস্তর বিশিষ্ট পেয়ালার মতো অংশ হলো বোম্যান্স ক্যাপসুল।
অ্যাফারেন্ট ধমনী ক্যাপসুলের ভিতরে ঢুকে রক্ত জালিকার সৃষ্টি করে, একে গ্লোমেরুলাস বলে। গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির মতো কাজ করে রক্ত থেকে পরিস্রুত তরল উত্পন্ন করে।