শুভ্র ঘোষ
দেশের অর্থনীতির মূল কেন্দ্র ঢাকা। সারা দেশের মানুষেরও নজর ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিনে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে এবং তারা স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে। এতে সীমিত সুযোগ-সুবিধার রাজধানী যেমন মানুষের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে, তেমনি বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধায়ও টান ধরাচ্ছে। ফলে রাজধানী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাঁরা বলছেন, রাজধানীকে ভারমুক্ত করতে না পারলে একে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার উদ্বোধনকালে বলেছেন, মানুষের নগরমুখী প্রবণতা বন্ধ করতে গ্রামের জনগণের কাছে নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্রামে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়লে এবং দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোপুরি চালু হলে রাজধানী বা নগরমুখী মানুষের স্রোত কমবে, সেইসঙ্গে বেকারত্বের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
শহরমুখীরা মনে করে, একবার রাজধানীতে প্রবেশ করলে আর চিন্তা নেই। কোনো না কোনোভাবে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ফুটপাতে টুকরি নিয়ে বসে পড়া কিংবা রিকশা নিয়ে বের হয়ে গেলেই উপার্জনের পথ খুলে যাবে। রাজধানীর বাইরের সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের এই চিন্তাই রাজধানীকে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরে পরিণত করেছে এবং নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাজধানীর দখল, দূষণ এবং অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এই মানুষের চাপ বড় ধরনের বাধা হয়ে রয়েছে। অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে যদি রাজধানীর মতো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল হ্রাস পেত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতির উত্তরণ তখনই হবে যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে, সেগুলো পুরোপুরিভাবে চালু হবে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে লাখ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। ইতোমধ্যে মিরেরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্থনৈতিক শিল্প অঞ্চলের কাজ শেষের পথে। অচিরেই এখানকার শিল্পকারখানাগুলো উত্পাদনে যাবে। এছাড়া মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোও কর্মসংস্থানের বড় উেস পরিণত হবে।
দেশের যেসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠছে, তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল কোথায় কোথায় গড়ে উঠছে, এ ব্যাপারে শ্রমিকদের অনেকেরই জানা নেই। যদি অঞ্চলগুলো সমপর্কে তাদের জানা থাকত বা জানানো হতো, তাহলে অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য সেসব অঞ্চলমুখী হতো। আমরা মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অবস্থান এবং সেগুলোতে শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তার তথ্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার। বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোই যে অন্যতম নিয়ামক শক্তি, এই বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তখন বেকার শ্রমিকরা শুধু রাজধানীমুখী না হয়ে অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চলমুখী হবে। এতে রাজধানীমুখী মানুষের ঢলও অনেকটা হ্রাস পাবে। আশা করা যায়, আগামী দশ বছরে শিল্পাঞ্চলগুলো যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন কোনো মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে থাকবে না। এই লক্ষ্য সামনে রেখে, এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মাগুরা