শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বায়ুদূষণ বনাম হাইড্রোলিক হর্ন

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৬

আহমেদ শরীফ

 

বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণে দিনে দিনে যেন বুড়িয়ে যাচ্ছে ঢাকা। ঢাকার মতো ভয়াবহ না হলেও চট্টগ্রামসহ বড়ো শহরগুলোতেও বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে ঢাকার আবহাওয়ায় যে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমাদের স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রাস্তায় বের হলেই গাড়ির ধোঁয়া, ধুলাবালি আর তীব্র হর্নে বেশিরভাগ মানুষেরই ত্রাহি অবস্থা হয়।

আমেরিকান দুটি গবেষণা সংস্থার জরিপে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় ১ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড, সিসা, কার্বন মনোক্সাইডসহ অনেক ক্ষতিকর উপাদান ঢাকার বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলেছে। এ কারণে অনেকেরই অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ দেখা দিচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। তাই যানবাহন থেকে যেন ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া নির্গত না হয়, ঢাকার আশেপাশের কলকারখানা থেকে যেন পরিমিত মাত্রায় ধোঁয়া বের হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই নির্মাণাধীন ভবন তৈরি হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি তো চলছেই। আর এতে ব্যস্ত সড়কসহ অলিগলি ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

যানজটের সঙ্গে আরেক ভয়ংকর উত্পাত হলো গাড়ির হাইড্রোলিক হর্ন। রাস্তায় একে অপরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে গাড়িগুলো কোনো নিয়ম না মেনেই অবিরত হর্ন বাজিয়ে যায়। স্কুল-কলেজ বা হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির, গির্জা আশেপাশে থাকলেও চালকদের হর্ন বাজানো যেন থামতেই চায় না। অথচ শব্দদূষণ রোধে হাউড্রোলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা মানছে ক’জন?

হাইড্রোলিক হর্ন উচ্চ মাত্রার শব্দ তৈরি করে। আর উচ্চ মাত্রার শব্দ মানুষের স্বাস্থ্য ও মানসিকতার জন্য খুব ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেবে জানা গেছে, ঢাকার অনেক ব্যস্ত সড়কে গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নের কারণে ৯৫ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ হয়। আর ১০০ ডেসিবল শব্দের কারণে মানুষ তার শ্রবণশক্তি হারাতে পারে বলে জানান চিকিত্সকরা। বাস-ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্নে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া সব বয়সী মানুষ বধিরতার আশঙ্কা ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, দুশ্চিন্তা, ঘুমের ব্যাঘাতসহ বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আপনি, আমি প্রতিনিয়ত এই শব্দদূষণের শিকার হচ্ছি, তবে বুঝতে পারছি না। ঢাকার বায়ুদূষণের সঙ্গে পাল্ল­া দিয়েই যেন হাইড্রোলিক হর্ন শব্দদূষণের কাজটা করে যাচ্ছে। আইন না মানার মানসিকতায় পরিবেশদূষণ বা শব্দদূষণের মতো নীরব ঘাতক প্রতিরোধ করা আইনও তাই অসহায়।

‘পিউর আর্থ’ নামের নিউইয়র্কভিত্তিক পরিবেশ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যেখানে প্রতিনিয়ত কলকারখানা গড়ে উঠছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, সেসব দেশে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন মারা যায় পরিবেশদূষণের কারণে। বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক। তাই ঢাকাসহ সারাদেশের পরিবেশদূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।

ঢাকা