বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রতিবন্ধী ভাবনা ও আমাদের অঙ্গীকার

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৪৬

প্রকাশ ঘোষ বিধান

 

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করে চললে কখনোই সমাজের উন্নতি করা যাবে না। এদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তাদের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। তাদের প্রতি সহূদয় হওয়া আমাদের সামাজিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কারণ তারাও সমাজের অর্ন্তভুক্ত।

৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটি পালিত হয়।

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের পিছনে রয়েছে এক ঘটনাবহুল স্মৃতি। ১৯৫৮ সালের মার্চ মাসে বেলজিয়ামে এক ভয়ানক খনি দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যায়। আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি চিরজীবনের মতো প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও পরহিতপরায়ণতায় বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা চিকিত্সা ও পুনর্বাসনের কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। পরের বছর জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন সম্মিলিতভাবে আন্তঃদেশীয় স্তরে এক বিশাল সমাবেশ করে। সেখানে সর্বসম্মতভাবে প্রতিবন্ধী কল্যাণে  বেশকিছু প্রস্তাব ও কর্মসূচি গৃহীত হয়। খনি দুর্ঘটনায় আহত বিপন্ন প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিবন্ধী দিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকেই কালক্রমে ৩ ডিসেম্বর সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিন হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ অর্থাত্ ১ কোটি ৭০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে। এর দুই বছর পর ২৪ নভেম্বর ২০১৫ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা, ২০১৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজের আরো দশজন যে কাজগুলো করতে পারে, সে কাজগুলো প্রাত্যহিক জীবনে করতে না পারার অবস্থাই হলো ডিসঅ্যাবিলিটি বা প্রতিবন্ধিতা। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন, ২০০১-এ বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধী অর্থ এমন ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিত্সায় বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং উক্তরূপ  বৈকল্য বা ভারসাম্যহীতার ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে অক্ষম।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন ও সহযোগিতার হাত বাড়ানো সবার কর্তব্য। প্রতিবন্ধী শব্দটি দ্বারা ত্রুটি বা শারীরিক অসম্পূর্ণ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, এটি কোনো ব্যক্তির পরিচয় নয়। প্রতিবন্ধী বলে কাউকে আলাদা করে দেখা উচিত নয়।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ভয় ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের কারণে পারিবারিক ও সামাজিকসহ সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের অধিকার খুবই কম পায়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কোনো না কোনো ভাবে পরিবারে অবহেলার শিকার। তবে কোনো পরিবারে কম, কোনো পরিবারে বেশি। তারা অবহেলার দরুন হতাশা, দুর্দশা ও দরিদ্রতার অভিশাপ নিয়ে জীবন পার করে।

খুলনা