শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাযুক্তিক দুটি প্রতিরোধক

আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১২

মো. আমিনুল ইসলাম

 

পত্রপত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই আমরা সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক বিবরণ পড়ছি। আজকাল দেশের সকল সড়কপথই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নতুন সড়ক আইন চালু করেছেন। এই আইনে অপরাধীর জেল-জরিমানা এমনকি মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে। আসলে আমাদের দেশে জনসংখ্যার যেমন আধিক্য, তেমনি যানবাহন সমান তালে বেড়ে চলেছে। দুর্ঘটনা কমাতে না পারলে আগামী বছরগুলোতে সড়কপথের চিত্র আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে—এক. বেপরোয়া ড্রাইভিং এবং দুই. বেপরোয়া ওভারটেকিং। কেবল এই দুটি সম্পূর্ণরূপে দূর করা গেলে সড়কপথ অনেকাংশ নিরাপদ হবে—এটা জোরের সঙ্গেই বলা যায়। কিন্তু কিভাবে? এখানেই আসছে সড়ক আইন ও প্রযুক্তির সমন্বিত এক ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধক কিছু কলাকৌশলের কথা। এমন ব্যবস্থা দরকার—যেখানে চালক অবশ্যই আইন মানতে বাধ্য হবেন। কোনো হেলপার ড্রাইভিং আসনে বসতে চোদ্দবার ভাববে। একজন দক্ষ ড্রাইভারও কখনোই বেপরোয়া ওভারটেকিংয়ের ঝুঁকি নেবেন না। কিন্তু কী সেই প্রযুক্তি? কী রকম কলাকৌশল?

মোটরগাড়ি এমন এক যান্ত্রিক যান যেখানে প্রয়োজনমতো আমরা ছোটোখাটো যে কোনো সাধারণ প্রযুক্তি সংযোজন করতে পারি। যেমন বলা যাক বেপরোয়া ওভারটেকিং ক্ষেত্রে একটি নতুন লাইট প্রযুক্তির কথা। বাস-কোচ-ট্রাকের পিছনের অংশে এক জোড়া লাল ও সবুজ বাতি কঠোর সড়ক আইনের অনুকূলে সম্পূর্ণ নিরাপদ ওভারটেকিংয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে। ধরুন, সামনে একটি গাড়ি। যথেষ্ট স্পিডে চলছে। পিছন থেকে অন্য একটি গাড়িও আসছে দ্রুততম বেগে। এবার এই গাড়ির খায়েশ হলো সামনেরটিকে ওভারটেক করার। এরকম ক্ষেত্রে পিছনের ড্রাইভার নিশ্চয়ই ঘন ঘন হর্ন বাজাবেন। কিংবা রাতের বেলা হলে হেডলাইটের এক ধরনের সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে সামনের গাড়িকে সাইড দেওয়ার সংকেত দেবেন। সামনের গাড়ি এই সিগন্যালিংয়ের পর দুরকম কাজ করতে পারবে— গাড়ির পিছন অংশে একটি পরিষ্কার লাল সংকেত জ্বালিয়ে দেবে অথবা সবুজ সংকেত জ্বালাবে। লাল সংকেতের অর্থ সামনে বিপদ বা অসুবিধা, অপেক্ষা করুন। আর সবুজ সংকেতের অর্থ ‘নো প্রবলেম।’ এগিয়ে আসুন, টপকে যান।

বাস-কোচ-ট্রাকে এরকম সিগন্যালিং প্রযুক্তি এবং এ বিষয়ক আইন অমান্যকারীর জন্য নিশ্চিত দণ্ড বিধান বেপরোয়া ওভারটেকিংকে শত ভাগ কি দূর করতে পারবে?

বাস-কোচ-ট্রাকে সাইরেন সংকেত প্রযুক্তি :ধরা যাক, সড়ক আইনে বাস-কোচের জন্য সর্বোচ্চ স্পিড লিমিটের এক নতুন বিধান চালু হলো। ট্রাকের জন্য সর্বোচ্চ আলাদা স্পিড লিমিট থাকা আবশ্যক। সেগুলো (বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে) ৫০, ৬০ কিংবা ৭০ কিলোমিটার যা হোক কিছু হতে পারে। এই ব্যবস্থায় বাস-কোচের ছাদে বা সুবিধামতো কোথাও একটি যান্ত্রিক সাইরেন সংকেত ব্যবস্থার সেটিং রয়েছে। এদিকে প্রত্যেক গাড়িতেই থাকে স্পিড মিটার। গাড়িটি কত স্পিডে চলছে তা স্পিড মিটারই নির্দেশ করে। ধরি, ৬০ বা ৭০-এর ঘরে এমন কিছু কারিগরি রয়েছে যে, যখন কাঁটা ঐ ঘরটিকে স্পর্শ করবে ঠিক তখনই সাইরেনটি বেজে উঠবে। অন্তত এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এরকম একটি ব্যাপারকে আমরা খুব জটিল কিছু মনে করতেও পারি না। একেবারেই সাধারণ এক ইলেকট্রিক্যাল কলাকৌশলও হতে পারে এটি।

সুতরাং মোটরগাড়িতে এরকম এক প্রাযুক্তিক ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যেতে পারে। ব্যাপারটা সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া ড্রাইভিং প্রতিরোধক এক চমকপ্রদ সতর্কীকরণ ইঞ্জিনিয়ারিং হবে বলেই মনে হয়।

রংপুর