বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে হলে

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ২২:১৩

বিপ্লব বিশ্বাস

 

এ বছরের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিক আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি অর্থাত্ সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এই এক বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বর্ষটি উদ্যাপনের ফলে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের দেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের পিছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে  বেশি বেশি জানার সুযোগ ঘটবে। ফলে তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হবে। কাজেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নেতা নন, তিনি বাঙালি জাতির নেতা এবং সর্বোপরি বিশ্ব নেতা। তাই সকল প্রকার দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অথবা ঐক্যবদ্ধভাবে এই বর্ষ পালন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই বাংলাদেশ আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারছে না। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অভিযান পরিচালনার কথা বলা  হলেও এই দুটি ক্ষেত্রে অভিযানের কোনো প্রভাব পড়ছে না। অর্থ, রাজনীতি আর দুর্নীতিই দেশের যে কোনো সমস্যা সমাধানের পথে সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দেখা দিচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নানা ধরনের অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। ছাত্র, শিক্ষক ও ইমামসহ সমাজের শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও এসব জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও জাতির এই নৈতিক অবক্ষয় মেনে নেওয়া যায় না।      

কাজেই মুজিববর্ষকে সফল করতে হলে, দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্যই দেশে সুস্থধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে গণতন্ত্রের প্রতি। প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।  আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব যাদের উপর রয়েছে, তাদেরকে সকল লোভ-লালসা ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। কারণ দেশে আইনের শাসন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঔপনিবেশিক আমলের চিন্তাধারা পরিত্যাগ করে স্বাধীন দেশের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অপরাধ দমন করতে গিয়ে যেন অপরাধ প্রবণতা ও অপরাধীর সংখ্যা বেড়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে করতে হবে ফলপ্রসূ। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশবাসীর সবচেয়ে বড়ো প্রত্যাশা হলো, সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আসুন সবাই মিলে দেশকে  দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, জঙ্গিমুক্ত ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত করে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে মুজিববর্ষকে বাঙালির ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখি।

ফরিদপুর