শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রয়োজন ইতিবাচক প্রচারণা

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২০, ২১:৪৫

করোনা আতঙ্কে রয়েছে পুরো বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে কোভিড ১৯। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একাধিক ভাইরাসের সমন্বয়ে এটা গঠিত বলে মানবদেহে প্রতিনিয়ত অবস্থান ও রূপ পরিবর্তনে সক্ষম এই ভাইরাস।

এখন হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন যাই বলা হোক, দক্ষিণ এশিয়ার এই জনবহুল দেশটাতে জনসচেতনতার অভাবের পাশাপাশি রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। নিজেকে ‘সঙ্গ বিচ্ছিন্ন’ করার কথা বলা যতটা সহজ, কাজে পরিণত করা ততটাই কঠিন। এখানে শহরাঞ্চলে পর্যন্ত তিন রুমের ছোট্ট বাসায় কমপক্ষে আট থেকে দশ জন লোক থাকে। এমনি আর্থিক সীমাবদ্ধতায়, এক মধ্যবিত্ত পরিবারেই যেখানে আলাদা থাকা সম্ভব নয়, সেখানে নিম্নবিত্ত, বিশেষত যারা বস্তিতে বসবাসরত, তাদেরকে ‘সঙ্গ বিচ্ছিন্ন’  করে রাখার প্রাথমিক উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হবে, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

এতদসত্ত্বেও এটা অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে, সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে বাংলাদেশ এখনো সংক্রমণ থেকে অনেকটাই দূরে আছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে যে বিষয়টি দেখা উচিত, সেটাই সম্ভবত বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। আর তা হলো, এই ঘাতক ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমণের পর বারবার সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই লক্ষণ প্রকাশ করছে; এবং আক্রান্তের অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে, মানবদেহে এর বিচরণকালও খুব স্বল্প সময়ের জন্য। বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত যতজন আক্রান্ত হয়েছেন তার মধ্যে শতকরা পঁচাশি ভাগেরও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন এবং পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক কাজে অংশগ্রহণ করতে তাদের কোনো বাধা নেই।

এখন, কোভিড ১৯ যতটা না ভয়াবহ, সম্ভবত, আমরা তাকে তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ রূপে উপস্থাপন করার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। এই প্রতিযোগিতা টেলি, প্রেস ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখানে প্রতিনিয়ত মিলছে কোভিড আক্রান্তদের ছবি, রোগের ভয়াবহ বর্ণনা, বাঁচার নানান কৌশলের নিত্য নতুন পদ্ধতি, এমনকি রোগ বিস্তারের নানান দিক। বলতে দ্বিধা নেই, এর সঙ্গে রাজনীতি যুক্ত হয়েছে। পারস্পরিক দোষারোপের ঘেরাটোপ থেকে এদেশের মানুষ বের হতে পারেনি। যে কোনো ধরনের ভিডিও আপলোড ও তা ভাইরাল করার প্রবণতা বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই তা আমাদের স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে, বেড়েছে আতঙ্ক।  সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে মানুষ, কমে আসছে আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা। সাধারণ সর্দি-জ্বরের সঙ্গে করোনা সংক্রমণকে আলাদা করতে না পারার দরুন চিকিত্সা বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। বাড়ছে জটিলতা। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে দ্বিধা নেই, কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া ও সুস্থ হওয়ার পুরো পদ্ধতির ব্যাপক প্রচারণা দরকার। দরকার বারবার মানুষকে আশ্বস্ত করা। এই প্রক্রিয়া, এখন, এই মুহূর্তে, খুব সহজ নয় সত্যি, কিন্তু এটির বিকল্প নেই। যে কোনো মহামারি রোধে এটিই কার্যকর হতে পারে। আতঙ্ক ছড়িয়ে কোনো কিছু  জটিল  করে তোলা মূলত সংকটকে প্রকারান্তরে ঘনীভূত করা।

টেলি ও প্রেস মিডিয়ায় সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি, এই রোগটিতে নিরাময় প্রক্রিয়ার বহুল প্রচার শুরু করতে হবে। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষত ফেসবুক ও টুইটারের বার্তাগুলো হওয়া উচিত আশা জাগানিয়া, রোগ মুক্তির ইতিহাস সম্বলিত। যাঁরা ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা  জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।

যেহেতু, সংক্রামক এই রোগটির এখনো তেমন কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, কাজেই জনগণের মাঝে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করতে হবে। আর ইতিবাচক মানসিকতা আমাদের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি  বাড়িয়ে দেবে, সন্দেহ নেই।

ঢাকা