শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিকিত্সকের সুরক্ষা প্রথম

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২০, ২১:৪৬

করোনাকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়তে চীন, কানাডা, আমেরিকার অবস্থান শীর্ষে। উন্নত বিশ্বের কাতারে শক্তিমান প্রত্যয়ী ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইজারল্যান্ড। উন্নত প্রযুক্তি, চিকিত্সাবিদ্যা থাকার পরেও করোনার ছোবলে তারাই পড়েছে দুমড়ে-মুচড়ে। চীন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে প্রাণঘাতী এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। চীনের চিকিত্সকরা বিশ্বের মডেল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। তারা প্রথমে নিজেদের সুরক্ষা করে পরে দেশ ও দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিয়েছে।

২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুপার মার্কেট, বিপণি বিতান ও মার্কেটসমূহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। ১০ জন চিকিত্সক আছেন আইসোলেশনে। এখানে এখনো কোভিড-১৯-এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়নি। যাঁরা বিদেশফেরত বা বিদেশফেরতদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে ইতালি বা চীনের মতো অবস্থায় যায়, আর সমান তালে চিকিত্সক, নার্স আক্রান্ত হতে শুরু করে তাহলে তারাও আগ্রহ হারাবে চিকিত্সা দিতে। তখন বিপদের আর শেষ থাকবে না।

আমাদের দেশে এখনো সব হাসপাতালে চিকিত্সক, নার্স ও অন্যান্য চিকিত্সাকর্মীর ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। জেলা ও উপজেলা শহরে তো নেইই। যার ফলে একদিকে যেমন চিকিত্সকরা সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগীদের চিকিত্সা দিতে ভয় পাচ্ছে; অন্যদিকে বেশিরভাগ রোগী চিকিত্সা না পাওয়ার ভয়ে বিদেশ ভ্রমণের কথা গোপন করছে। রোগীদের ধারণা বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে তারা আর চিকিত্সা পাবে না, প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটছে। এভাবে চললে একসময় চিকিত্সাসেবা ব্যাহত হবে।

করোনা ভাইরাস যেভাবে বিস্তার করছে, সেটা একমাত্র মানুষের সচেতনতা ও চিকিত্সাসেবা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এটি যেহেতু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় তাই চিকিত্সকরাও নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ড বয় কেউও। এক্ষেত্রে আগে তাদের সুরক্ষিত করতে হবে। লেভেল-১ প্রোটেকশনে সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিসপোজেবল গ­াভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, ওয়ার্কিং ইউনিফর্ম সরবরাহ করার আদেশও দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।

কোয়ারেনটাইনে যেসব চিকিত্সক, সেবিকা-সেবকসহ সংশ্লিষ্টরা সেবা প্রদান করবেন তাঁদের বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের এই জাতীয় দুর্যোগ থেকে তাঁরাই কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করবেন। আমরা যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে টিভিতে নিউজ দেখছি ঠিক তখনই জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে চিকিত্সকরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। প্রেসার দিয়ে নয়; প্রেষণা দিয়ে কাজ আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ প্রেষণার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজকে করোনার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। কিন্তু অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ করতে পাঠান তো কাউকে, একটা হেলমেট ছাড়া যাবে কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে? তাহলে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কিভাবে চিকিত্সা দেবেন? আমাদের ডাক্তাররা তো চিকিত্সা দিচ্ছেন। সরকারের প্রতি চিকিত্সকদের আস্থা বাড়ানোটা বেশি জরুরি। গত বছর ডেঙ্গুতে চিকিত্সকদের একটি করুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই সময়ে শতাধিক চিকিত্সক-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। যাঁরা সেবা দেবেন তাঁরা আক্রান্ত হলে আস্থার জায়গাটা কোথায়? তাই তাদের আস্থা রাখার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চিকিত্সকদের হাত ধরেই ভয়-শঙ্কার আঁধার কেটে আলো আসবেই।

সাতক্ষীরা