শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষার ক্রান্তিকাল

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২১, ২১:১৮

সিনথিয়া সুমি

শিক্ষাক্ষেত্রে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বৈশ্বিক মহামারি থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে নানা লোকের নানান কথা শুনতে পাই। অনলাইনেও মন্তব্যের শেষ নেই। পত্রিকায় নানা মতের লেখা ছাপা হয়। অনেকে ভার্চুয়াল ক্লাসের কথা বলেন। আজকের ডিজিটাল যুগে বিষয়টি বাস্তবায়নের সুযোগ অবারিত। তারপরও প্রশ্ন আছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ে পড়া আদায় করতে শিক্ষকরা হিমশিম খান, সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভার্চুয়াল ক্লাস করে কীভাবে পড়া আদায় করা সম্ভব?

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারগুলোতে পাঠ্যবইয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন। খোলা হয় ফেসবুক পেজ। আপলোড করা হয় উত্তরপত্রসহ প্রশ্ন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জুমে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাঠায়। শিক্ষার্থী তার মর্জিমতো ডাউনলোড করতে পারে। এই হলো ভার্চুয়াল ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তি। স্বশিক্ষিত কিংবা স্বল্পশিক্ষিত অভিভাবকরা এমন যান্ত্রিক শিক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়ছেন। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর কাছে বিষয়টি যান্ত্রিক খেলার সামগ্রী বলে মনে হয়। এ মাধ্যমে অমনোযোগিতার কারণে শিক্ষকের বকুনি কিংবা চোখ রাঙানি ও পড়া আদায়ের ভয় নেই। এমন শিক্ষা কতদিন বজায় রাখা সম্ভব, তা একমাত্র ভবিষ্যত্ই বলতে পারে। তারপরও নিরাশ হয়ে লাভ নেই। করোনার বিষাক্ত ছোবল থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এ পথেই হাঁটছে। করোনার ছোবলে অসংখ্য শিশু-কিশোরের জীবনে নেমে এসেছে এমন অমানিশা। এদিকে অটো পাসের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলছাড়া। কেউ আহ্লাদে আটখানা, কেউবা ভবিষ্যত্ অন্ধকার ভেবে দিশেহারা। উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-ইচ্ছুকরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষার গতিশীলতা ব্যাহত হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে কোনোভাবেই শিক্ষার মূল স্রোতধারা ফেরানো যাচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের হচ্ছে অপূরণীয় ক্ষতি।

কেউ কেউ বৃদ্ধ মা-বাবা, ভাইবোনের মুখে অন্ন তুলে দিতে পেশা পরিবর্তন করে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কাঁচামাল, কাপড় কিংবা অন্য কোনো পণ্য বিক্রি করছে। কেউ লোকলজ্জার ভয়ে পরিচিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে কাজ করছে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে। অনেক কর্মহারা বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গাঁয়ের পথে পা বাড়িয়েছেন। এমন স্থান পরিবর্তনে কর্মহারা মা-বাবার সন্তানদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হবে। এ ধরনের শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কাই বেশি।

শিক্ষার এমন ক্রান্তিকাল স্বাধীনতার পর কখনো আসেনি। মাদ্রাসা খোলা রেখে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জাগছে। বৈশ্বিক মহামারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম যদি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে, তাহলে জাতির জন্য নতুন প্রজন্ম বোঝায় পরিণত হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও জাতির ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। তাই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা জরুরি।

শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ