বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কর্ম-শিল্পের মূল্যায়নে আমাদের ব্যর্থতা

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৯, ২১:৫৩

শহিদ রাসেল

কখনো কখনো খুব সহজ মনে হওয়া কাজটিও আমাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যেমন—কবিতা আবৃত্তি করা, উপস্থাপনা করা, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করা প্রভৃতি। এই ধরনের কাজ বাইরে থেকে দেখলে বেশ উপভোগ্য ও সহজতর বলে মনে হলেও বাস্তবতা পুরো ভিন্নতর। মূলত প্রত্যেকটি কাজের একটা আলাদা শিল্পবোধ আছে যা রপ্ত করতে না পারলে ঐ কাজে সফলতা অর্জন করা যায় না। যেমন ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’-এর কাছে উত্থাপিত না হলে কোনো সমস্যারই যথার্থ সমাধান আসে না। আমাদের মধ্যে অনেকে সামান্য অসুখ করলে ফার্মেসিতে ঢুঁ মারেন, ব্যবহূত যন্ত্রাবলি নষ্ট হলে নিজেই সারতে বসে পড়েন কিংবা সুযোগ পেলেই নিজেকে শো-অফ করার সুযোগ লুফে নেন। এই যে আমাদের ‘সবজান্তা’ হওয়ার শখ (অভ্যাস), শেষ পর্যন্ত তা বরাবরই বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনে। আমাদের উচিত প্রতিটি পেশাকে স্বীয় সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে ডিল করা। যেমন ফটোগ্রাফির বিষয়টা অনেকে বেশ হালকা ভাবেন; মনে করেন—ক্যামরাটা হাতের কাছে থাকলেই ভালো ছবি তোলা যাবে, আপনি এই ভাবনায় ডুব দিয়ে কখনোই বাস্তবতার কাছে পুরস্কৃত হতে পারবেন না। মানসম্পন্ন ছবি তুলতে হলে একজন ফটোগ্রাফারের দ্বারস্থ হওয়াটাই বুদ্ধিমানের পরিচয়। সিনিয়রদের মুখে শুনেছি—সুন্দর করে কথা বলাটাও একটা শিল্প, যা আমরা অনেকেই আয়ত্ত করতে পারিনি। তাই নিজের সম্পর্কে প্রথমে নিজেরই একটা স্পষ্ট ধারণা রাখা দরকার, যা অন্য সবার সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি বা এটিচিউড মেইনটেইন করতে সাহায্য করবে।

আমাদের সমাজ সবসময় বিজয়ীদেরই স্মরণে রাখে, ইতিহাসে ঠাঁই পান সফল ব্যক্তিত্বরা। আলোচ্য বিষয় হলো—বিজয়ী বা সফল ব্যক্তিত্বের গঠনে অনেক পরাজিতের বা ব্যর্থতার গল্প থাকে, যা পরবর্তী প্রতিযোগীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। তাই যে কোনো বিষয়ের ভালোমন্দ দু’দিক তথা উভয়ের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হওয়া দরকার, এতে করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি সহজতর হয়। অব্যাহত প্রচেষ্টার শেষবিন্দুতে ফলাফল, যা সুমিষ্ট বার্তা বা শিক্ষণীয় বাণীটা শুনিয়ে দেয়। তাই হতাশ না হয়ে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার অদম্য তৃপ্তিটা ধরে রাখুন।  যেমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওয়েটিং লিস্ট থেকে উঠে আসা প্রতিযোগী তার সর্বোচ্চটা দিয়ে মেধা-তালিকার শীর্ষস্থানীয়দের নেতৃত্বে চলে আসে। এভাবে অনেক সুপ্ত প্রতিভা সমাজ-সভ্যতাকে তাক লাগিয়ে দেয়। মনে রাখা যেতে পারে—চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা তা একদিনে গড়ে ওঠেনি। একটা স্বাভাবিক বিষয়ে যখন কেউ ক্রমাগত অস্বাভাবিক রিয়েক্ট করে, তখন বুঝতে হবে—প্রতিযোগিতার মাঠে ভারসাম্যহীনতা বিরাজ করছে। আর খুব সহজ অঙ্কটিও যখন জটিলতম সূত্রে দুর্বোধ্য করে তোলা হয়, তখন আমরা মনে মনে জপ করি—‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম ...’। 

কেবল একাডেমিক পড়াশোনায় জীবন ধরা পড়ে না। একটা জীবন পেতে হলে—পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া জীবিকা ও তৃণমূলের ভূমিকাও অনন্য ভূমিকা রাখে। একটা পথশিশু বা ভ্রাম্যমাণ দোকানির মুখচ্ছবিতে যে করুণ আর্তনাদ বা প্রশান্তির রেখা ফুটে থাকে; তা ধরতে পারার পেছনে জীবন লুকিয়ে থাকে। আর জীবনের সংজ্ঞায়নে পুঁথিগত বিদ্যার পৃষ্ঠা না জপে আমাদেরকে দৃশ্যত জীবনের মধ্য থেকেই প্রত্যাশিত জীবনধারাকে আবিষ্কার করতে হবে। পরিতাপের বিষয় হলো—জীবনের অর্থ উপলব্ধি না করেই অনেক তথাকথিতের জীবনাবসান হয়। তাদের কাছে জীবনীশক্তি বা জীবন-সভ্যতা অধরাই থেকে যায়। ‘আমি খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাব’—এ ধরনের অনুকাব্যগুলোর মানে না বুঝে যেন মরণের ডাক না আসে...         

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়