জাহাঙ্গীর আলম
৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা হান্নানের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছিল দিনমজুরি করে। একদিনের ঘটনা—দিনাজপুর শহরের একটি এলাকায় নির্মাণকাজে রাজমিস্ত্রির যোগালি হিসেবে শ্রম বিক্রি করছিলেন হান্নান; এমন সময় মাইকে শুনলেন, দিনাজপুর সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ড্রাইভিংসহ আরো কিছু বিষয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পাওয়া যাবে। মাইকে যাঁরা প্রচারকার্য চালাচ্ছিলেন, তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত লিফলেটও ছিল। হান্নান আগ্রহ নিয়ে লিফলেট সংগ্রহ করলেন।
কাজের ফাঁকে নিজের সীমিত ‘বিদ্যা’ নিয়ে লিফলেটের বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করলেন হান্নান। সেখানে লেখা ছিল—দারিদ্র্যবিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ‘স্কিলস ফর এমপয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ)’ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে পাঁচ লাখ দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের চাকরির সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে কমপক্ষে ৩০% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে।
হান্নান দেরি করলেন না; পরদিনই দিনাজপুর সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে হাজির হলেন। সেখানকার নিয়ম-কানুন সব শোনার পর হান্নান ‘মোটর ড্রাইভিং উইথ মেইনটেনেন্স’ কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করলেন। তাঁকে বলা হলো—নির্ধারিত দিনে মৌখিক পরীক্ষায় যদি তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেন, তাহলেই কেবল এখানে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পাওয়া যাবে।
নির্ধারিত দিনে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিলেন হান্নান এবং টিকে গেলেন। এরপর সফলভাবে তিন মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করে যেদিন শিক্ষানবিশ চালক হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলেন, সেদিনই শহরের এক ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর দেখা হলো। কয়েক মাস আগে হান্নান ধনাঢ্য এ ব্যক্তির একটি নির্মাণকাজে শ্রমিক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি যখন শুনলেন, হান্নান দিনাজপুর সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সফলভাবে মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করেছে, তখনই তিনি হান্নানের কাছে একটি প্রস্তাব রাখলেন। প্রস্তাবটি ছিল এরকম—হান্নান চাইলে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতে পারে।
এত সহজে চাকরি হবে, ভাবতেই পারেননি হান্নান। প্রশিক্ষণ শেষে এককালীন বৃত্তি হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৯ হাজার টাকা স্ত্রীর হাতে দিয়ে পরদিনই তিনি খুশিমনে চাকরিতে যোগ দিলেন। এভাবেই ‘দিনমজুর’ হান্নানের রূপান্তর ঘটল চাকরিজীবী হান্নানে।
প্রতিমাসে বেতনের টাকার একটা অংশ সঞ্চয় করছেন হান্নান। মনের কোণে সুপ্ত বাসনা—সঞ্চয়ের টাকায় একটা পিকআপ কিনবেন; গাড়ির মালিক হবেন। তারপর নিজেই চালাবেন নিজের গাড়ি। হান্নান বিশ্বাস করেন—ভাগ্য পরিবর্তনে ইচ্ছাই যথেষ্ট।
ঢাকা