আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল থেকে দেওয়া ডায়েরির রিপোর্টই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। পরীক্ষার চাপ যেন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হতে না পারে, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করারও চিন্তাভাবনা চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া। শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষাব্যবস্থা সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পড়ালেখার জন্য শিশুদের অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। তারা যেন শিক্ষাটাকে আপন করে নিতে পারে, নিজেদের মতো করে পড়তে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় শিশুদের চেয়ে তাদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের মধ্যে বেশি প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষাটাকে শিশুরা যাতে আপন করে নিতে পারে।
উচ্চ আদালতের একটি রায়ে বলা হয়েছে যে, শিশুদের শারীরিক ওজনের ১০%-এর বেশি ওজনের ব্যাগ তাদের কাঁধে না দিতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলো মানলেও কিন্ডারগার্টেনগুলো কোনো তোয়াক্কাই করছে না। কিছু কিছু স্কুল তাদের বইয়ের সংখ্যা বাড়িয়েই যাচ্ছে। বইয়ের দামও আকাশচুম্বী। এর বাইরে রয়েছে ক্লাস টেস্ট, সাপ্তাহিক, মাসিক, পার্বিক, সাময়িক পরীক্ষার বোঝা তো আছেই। সকল পরীক্ষার জন্য আলাদা খাতা রাখার বিধানও রয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বছরে ২৫-৩০টিও পরীক্ষা নেওয়া হয়।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শিশুদের বইয়ের সংখ্যা যত বেড়েছে তাদের মানসিক বিকাশের জন্য উন্মুক্ত মাঠ ততই কমেছে। পড়া আর পরীক্ষার চাপে শুধু শিশুরাই নয়, অভিভাবকদেরও বেহাল দশা। স্কুল আর কোচিংয়ের পরীক্ষা দিতেই তাদের সময় শেষ। খেলতে কিংবা ঘুরতে গেলে আনন্দেও এক ধরনের ভীতি কাজ করে তাদের মধ্যে। মাথায় সব সবসময়ই পরীক্ষা আর পরীক্ষা। যা শিশুদের সুষ্ঠু ও সুস্থ বিকাশে অন্তরায়।
শিশুদের মানসিক বিকাশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার সুদূরপ্রসারী ফল আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পেতে শুরু করব বলে আশা করি।
ঢাকা