রিপন কুমার দাস
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মত্স্য উত্পাদনে বর্তমানে বিশ্বে ৩য় স্থান দখল করেছে। কিন্তু দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমি ও জলাশয় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে মত্স্য উত্পাদন হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩ টন মত্স্য ও মত্স্য সামগ্রী যার মূল্য ৪২৮৭ কোটি টাকা, রপ্তানি করার বিপরীতে ৭৮ হাজার টন মত্স্য আমদানি করা হয়েছে। তাই দেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিটি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মত্স্য শিল্পনগরী স্থাপন করা প্রয়োজন। মত্স্য চাষকে এখন আর সনাতন পদ্ধতিতে না রেখে রিসার্কুলেশন একুয়াকালচার (আরএএস) ও বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। আরএএস ও বায়োফ্লোক এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সাধারণ পদ্ধতির থেকে ৩০ থেকে ৪০ গুণ মত্স্য উত্পাদন করা সম্ভব।
কেন দরকার মত্স্য শিল্পনগরী? শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য। ফিসারিস ডিপ্লোমা ও মত্স্য বিষয়ে ভোকেশনাল বিষয়ে যারা পাস করছে, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য। দেশে মাছের চাহিদা মেটানো ও বিদেশে মত্স্য সম্পদ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য। শিক্ষিত বেকার যুবদের মত্স্য চাষ করার জন্য নিজস্ব জমি বা জলাশয় নেই, তাই তাদের উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
জনবহুল এলাকায় মত্স্য নগরী করার ক্ষেত্রে প্লটের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মত্স্য উত্পাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি প্রজেক্টের জন্য ১০ লাখ টাকা করে খরচ হবে। এছাড়া নগরীতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত্, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। একজন উদ্যোক্তা প্লটের জন্য আবেদন করার ৩ মাসের মধ্যে অবকাঠামো, পানির ট্যাংক ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করে উদ্যোক্তার কাছে মত্স্য নগরী কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করবেন। প্রজেক্টসমূহ নগদ মূল্যে অথবা ৫ বছরের ১০টি কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। কিস্তির ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হবে, অর্থাত্ একজন উদ্যোক্তা বিনা জামানতে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে প্রজেক্টের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।
নগরীতে ফিডমিল উত্পাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের মাঝে একটি প্লট বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। কারণ ফিডমিল বাইরে থেকে ক্রয় করতে হলে সঠিক মানের নাও হতে পারে অথবা সময়মতো মাছের খাবার সংগ্রহ করা নাও যেতে পারে। বাইরে থেকে ফিডমিল সংগ্রহ করলে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে উত্পাদন খরচ বাড়বে। উদ্যোক্তাদের যাতে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য বিভিন্ন স্থানে থেকে সংগ্রহ করতে না হয় সেজন্য নগরীর মধ্যে একটি প্লটে মাছের ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিপণনের জন্য একটি প্লট বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। দূর দূরান্ত থেকে ওষুধ ক্রয় করার জন্য পরিবহন খরচ বেশি হয়, আর অনেক সময় নিম্নমানের ওষুধ ও পণ্যের কারণে উত্পাদন ব্যাহত হতে পারে। মত্স্য সংরক্ষণের জন্য বরফ উত্পাদনের জন্য একটি প্লট বরাদ্দ ও বিদেশে মত্স্য রপ্তানি করার জন্য ফিসারিজ প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করতে হবে।
বেশিরভাগ সময় আমাদের দেশে কৃষক ও মত্স্যজীবীরা মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য তাদের উত্পাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই মত্স্য শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা যাতে তাদের উত্পাদিত মাছের সঠিক দাম পায়, সেজন্য নগরীর একটি প্লটে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন। যেখানে খুচরা ও পাইকারি মত্স্য বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে এবং এলাকার ক্ষুদ্র মত্স্য বিক্রয়কারীরা যাতে মত্স্য ক্রয় করতে পারে সেজন্য একটি প্লটে মাছের আড়ত স্থাপন করা যেতে পারে। নগরীতে যাতে মাছ উত্পাদনের জন্য মাছের পোনার সংকট দেখা না দেয় সেজন্য হ্যাচারি স্থাপন করার জন্য কমপক্ষে একটি প্লট উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ করার প্রয়োজন হবে। ঐ প্লটে মত্স্য হ্যাচারি স্থাপনের জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা নগরী কর্তৃপক্ষ প্রদান করবেন। মত্স্য শিল্পনগরী স্থাপন করা সম্ভব হলে দেশে মত্স্য উত্পাদন করে চাহিদা পূরণসহ বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
পটুয়াখালী