শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আমাদের যাত্রাপথকে সুন্দর, আরামদায়ক করি

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৮

জলি ফাতেমা রোখসানা

 

সড়ক দুর্ঘটনা মানে এক একটি পরিবারের কান্না। এ কান্না কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই কোথায়ও না কোথায়ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর চোখে পড়ে। এসব দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে, বছরের পর বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা ফুলের মতো সাজানো সংসার মুহূর্তেই  ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সারা জীবনের সমস্ত স্বপ্ন। স্বাভাবিকভাবেই একটি দুর্ঘটনা মানে স্বজন হারানোর মর্মস্পর্শী বেদনা, যার বোঝা বইতে হয় সারা জীবন। স্বজনহারা মানুষের বুকফাটা কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে আর মানবতা হাহাকার করে।

বিভিন্ন সভা, সেমিনার এবং গোলটেবিল বৈঠকে সড়ক দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণ উঠে এসেছে। এতে দুর্ঘটনার কারণ বলতে অদক্ষ চালক, সড়কের তুলনায় অধিক সংখ্যক গাড়ি, বেপরোয়া গতির গাড়ি, রাস্তায় জ্যামিতিক ত্রুটি, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালানো, পথচারী ও যাত্রীদের অসাবধানতা, বিপরীতমুখী যানবাহনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ, যানবাহনে অডিও সিডি বাজানো বা মোবাইল ফোন ব্যবহার, চালকের মনোযোগ ও দৃষ্টিভ্রম ঘটানো যাত্রী, রাস্তায় গতিরোধকের অভাব, সড়ক ও জনপদের ওপর বা পাশে হাট-বাজার, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের বেহাল দশা, রাস্তা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার অভাব, ফুটপাথের অভাব কিংবা ফুটপাথকে দোকানপাটের স্থান হিসেবে ব্যবহার, চিন্তাগ্রস্ত চালক ও হেলপার, ঝুঁকিপূর্ণ মোড়, ফুটওভারব্রিজের অভাব, ওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহারে অনীহা, রোড ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা অতিক্রম, যত্রতত্র ওভারটেকিং ও ক্রসিং, বিপরীত রাস্তায় যান চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ভুয়া লাইসেন্স, দালালচক্র, যানবাহন স্বল্পতা ইত্যাদিকে তুলে ধরা হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কারণগুলো গুচ্ছভাবে সাজালেও নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে উদঘাটিত হবে যে দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ রাস্তা ব্যবহারকারী, যাত্রী, চালক, মালিক, বাহন, রাস্তার অবস্থান, প্রশস্ততা, পুলিশ, বিআরটিএসহ অনেকেই দায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। গণসচেতনতার অংশ হিসাবে পাঠ্য বিষয়ে সড়ক ব্যবহার নীতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমাদেরকে স্কুলে শেখানো হতো ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে আর ফুটপাথ না থাকলে রাস্তার ডানদিক দিয়ে হাঁটতে। তাতে পথচারী হিসাবে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। ডানদিক হাঁটতে গেলেও এখন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, কেননা ক্ষমতাবানরা উলটোপথে যান চালান। আমাদের শেখানো হতো— ‘লালবাতি জ্বললে গাড়ি থামবে আর তোমরা রাস্তা অতিক্রম করবে। যখন গাড়ি চালাবে তখন পথচারীদের দাবি আগে মেটাবে, রাস্তার বাম পাশ দিয়ে গাড়ি চালাবে।’ এখন পুলিশের সামনেই এসবের ব্যত্যয় ঘটছে। শ্রমিক ও তাদের নেতারা পুলিশের চেয়ে ক্ষমতাবান।

অথচ আমাদের একটু সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতা এই দুর্ঘটনা অনেকাংশেই বন্ধ করতে পারে এবং বাঁচাতে পারে হাজারো মানুষের জীবন। আসুন, আমরা সবাই এসব দুর্ঘটনা রোধে এগিয়ে আসি এবং মানুষের জীবন রক্ষা করি। এ বিষয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি ও বিভেদ নয়। আসুন, আমাদের যাত্রা পথকে সুন্দর, আরামদায়ক এবং নিরাপদ করি।

চট্টগ্রাম