শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির শুদ্ধতার বিকাশ

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৬

মানুষ এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। সত্য সুন্দরের অপার সম্ভাবনা এই মানুষের মাঝে। মানবিকতা ও পাশবিকতার সুস্পষ্ট রেখা ফুটিয়ে তোলে মানুষ। মানুষ ভাবে, চিন্তা করে, দৃষ্টিভঙ্গি লালন ও ধারণ করে। এই ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি দাগ টেনে পার্থক্য করে দেখায় মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের। দৃষ্টিভঙ্গির শুদ্ধতায় মানুষ অসামান্য উচ্চতায় পৌঁছে। দৃষ্টিভঙ্গির অশুদ্ধতা অসুস্থতা পশুত্বকে হার মানায়।

সম্প্রতি নারী নির্যাতন-নিপীড়ন, খুন-ধর্ষণের কয়েকটি লোমহর্ষক ঘটনা ও তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির শুদ্ধতা ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ সকল দিক থেকে অন্যায় ও অপরাধ। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অপরাধের প্রতি একআকাশ ঘৃণা। অন্যায়কারী ও অপরাধীর পরিচয় একটাই ‘সে অপরাধী ও অন্যায়কারী’। অপরাধী—সে শিক্ষক হোক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, আলেম, ডাক্তার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিবান, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের কেউ হোক, তার সব পরিচয় ছাপিয়ে একটাই তার পরিচয় সে/তিনি অপরাধী। অপরাধ ও অপরাধীর ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরো শুদ্ধ করতে হবে এবং এ শুদ্ধতার বিকাশ ঘটাতে হবে। নির্যাতিতের, আক্রান্তের ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশাকে সামনে না এনে বা বিবেচ্য না বানিয়ে তার পক্ষে দাঁড়ানো। নুসরাত জাহান রাফি মাদ্রাসাছাত্রী বলে আমরা নীরব থাকব? নির্যাতনকারী অধ্যক্ষ বলে তার পক্ষে থাকব? প্রতিবাদে জ্বলে উঠব না? নেতৃস্থানীয়, অভিজাত বা হাই প্রোফাইলের কেউ অপরাধ করলে তা কি অপরাধ নয়? নির্যাতিত শ্রমিক বলে এড়িয়ে যাব? তার পক্ষে প্রতিবাদী  মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ওঠাব না? নিপীড়ক মালিক বলে মুখে কুলুপ এঁটে থাকব? না। তা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না।

সকল প্রকার নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক জাগরণ ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সামাজিক জাগরণ যেন অপরাধীকে এই সতর্কবার্তা দেয় যে, তুমি অপরাধী, পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে। কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। আমাদের জাগরণ ও সচেতনতা থেকে নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষ যেন এই বার্তা ও ভরসা পায় যে, সে একা নয়। আমরা আছি তার সঙ্গে। সমাজ তার পাশে। তারুণ্য তার পক্ষে। আইন তার নিরাপত্তায়, সুরক্ষায়। মানবিকতার বিপুল শক্তি তার পক্ষে। তার সুরক্ষায় শক্ত প্রাচীর তৈরি।

তাই আমাদেরকে, আজকের তারুণ্যকে, সমাজকে বুক টান করে দাঁড়াতে হবে সকল অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে। নারী নির্যাতন, খুন-ধর্ষণের বিরুদ্ধে। গণসচেতনতার জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে হবে অপরাধের বাঁধকে। তারুণ্যের জাগরণে ও দৃষ্টিভঙ্গির শুদ্ধতায় দৃঢ়তায় দাঁড় করাতে হবে মানবিকতার বিজয় কেতন। পাশবিকতা ভেসে যাক আমাদের শুদ্ধতার স্রোতে। তাই প্রয়োজন আমাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ, সুস্থ ও শুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ। জয় হোক শুদ্ধতার, মানবিকতার।

মৌলভীবাজার