বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বোমা মেশিন হটাও পঞ্চগড় বাঁচাও

আপডেট : ১০ মে ২০১৯, ২১:৩৯

শতাব্দী জুবায়ের

 

পঞ্চগড় জেলায় অবৈধভাবে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলছে তবে  বন্ধ হচ্ছে না। বোমা মেশিনের সাহায্যে ৮০ থেকে ১২০ ফুট গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে মাটির নিচে সৃষ্টি হচ্ছে শূন্যতা। এর ফলে ভূমিক্ষয়, ভূমিধস, ভূমিকম্পসহ কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। আবার অল্প মাত্রার ভূমিকম্পেই হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ক্ষতি। কারণ মাটির নিচে পাথর থাকলে ভূমিকম্পকে সহনীয় করে তোলে।  স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীরা অনেক প্রভাবশালী। তাদের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও যেন হার মানছে। হার মানছে বলতে সমঝোতা করে কাজ করে। না হলে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করছে অথচ প্রশাসন কিছু করছে না। দায়সারাভাবে যেন কাজ করছে প্রশাসন। দেখেও যেন না দেখার ভাণ করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসনের এতে সুবিধা কী?

পত্রিকা থেকে জানতে পারি, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ ব্যাপারে প্রতিবারই আলোচনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসন এবং মাঝে মাঝে টাস্কফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানও পরিচালনা করছে। তবু কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। এত কিছুর পরও বন্ধ হচ্ছে না, বোঝা যায় ব্যাপারটা! সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে প্রতিকারের দাবিতে সভা সমাবেশ, মানববন্ধন করে আসছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এসব কানেই নিচ্ছে না। একটা বিষয় স্পষ্ট মনে হচ্ছে—প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় বোমা মেশিন মালিকরা কাজ করছে।

হাইকোর্ট সারা দেশে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য—পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী উপজেলার ডাহুক, করতোয়া, তালমা, সাওসহ বিভিন্ন নদী, সরকারি খাসজমি এবং লিজ নেওয়া জমি থেকে তিন শতাধিক বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার হেক্টর আবাদি সমতল ভূমি কেটে পাথর তোলা হয়েছে। পাথর তোলার পর এসব জমি পতিত হয়ে পড়ছে। এর ফলে গত ১০ বছরে এই জেলায় প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কম উত্পাদন হচ্ছে।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, ভূমিক্ষয় ও ভূমিকম্প রোধ, ফসল উত্পাদন বাড়ানো, সরকারি সমপত্তি রক্ষাসহ আরো নানাবিধ কারণে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা জরুরি। যারা পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। না হলে রক্ষা পাবে না পঞ্চগড়।

কুমিল্ল­া বিশ্ববিদ্যালয়