বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডেঙ্গু জ্বর :ভাবতে হবে এখনই

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৯, ২২:০৬

বোরহান বিশ্বাস

 

আমার বোন-জামাই যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেটি রক্তে প্লাটিলেট পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা ডেঞ্জার বর্ডারের সামান্য ওপরে ছিল। বেশ কিছুদিন চিকিত্সার পর তিনি এখন সুস্থ। আজকাল প্রায়ই লোকজনের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনছি। রোগী এলে ডাক্তাররা কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে তাদের রক্ত পরীক্ষা করতে দিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত সিজনাল জ্বর।

গত ৪ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত তিন দিনে ২৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৪/৫গুণ বেশি। ...চিকিত্সকরা জানান, এখনই নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডেঙ্গু মহামারি রূপ নিতে পারে।’

জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তিন শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানুয়ারিতে ৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ১১৮, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৪, মে মাসে ১৩৯, জুনে ১৬৯৯ এবং জুলাইয়ের তিনদিনে ২৫৪ জন আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। মাত্র দুইদিনের জ্বরেই মৃত্যু হয় এক চিকিত্সকের।

সাধারণত জুন ও জুলাই অর্থাত্ বর্ষাতেই ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। জীবাণুবাহিত মশক নিধনের মাধ্যমেই ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব। এর সরাসরি কোনো প্রতিষেধক নেই, রোগীর লক্ষণ বুঝেই সাধারণত এর চিকিত্সা দেওয়া হয়। বর্ষা চলছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় অর্থাত্ মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। নর্দমা পরিষ্কার কিংবা মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। এতে এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে, সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্য হু স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস (এসএজিএ) বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিশ্বে গত ৬ দশকে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩০ গুণ বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে রোগ প্রতিরোধে নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্বের মোট ১২৮টি দেশের প্রায় ৩৯ কোটি লোক প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ লাখ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন বলে ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তাই ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকারে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গণসচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচারণা আশা করছি।

ঢাকা