পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, কুশিয়ারা, সুরমা প্রভৃতি অববাহিকার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কযেক লাখ এবং এসব মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন তাঁরা। অনেকেই পরিবারসহ ছোট ছোট নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তাদের বানভাসি জীবনযাপন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ। সরকারের ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানুষকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে তোলে। তাই যখনই অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অবশ্যকর্তব্য। বানভাসি মানুষের পাশে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির দাঁড়ানো উচিত। বিপদগ্রস্ত লোকেরা সাহায্যের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে খুবই উপকৃত হয়। যাঁরা অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, অভাবী মানুষকে ত্রাণসাহায্য করে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, তাঁরাই সত্যিকারের মানবদরদি।
বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের সহায়-সম্পদ ও জীবন-জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বসতভিটা, জমি-জিরাত ও ফল-ফসল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত অঞ্চলের অসহায় বানভাসি মানুষ কতোটা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সেখানে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। প্রধান নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রবল স্রোতে পানির সংযোগ পাইপ, গভীর নলকূপ ও কুয়া চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সর্বত্র বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাই জরুরিভিত্তিতে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপনরত বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তত্পরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। টাকাপয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধ—যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এখনই সময়। বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। দুঃখের রজনী যেমন শেষ হতে চায় না, তেমনি বানভাসি মানুষের কাছে এখন একেকটি দিন যেন দুর্বিষহ কষ্টের অনন্তকাল!
সমাজে যাঁরা বিত্তবান, তাঁরা সবাই চিত্তহীন নন, বর্তমান প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তাঁরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। এজন্য দেশের ধনাঢ্য ও সঙ্গতিসম্পন্ন লোকেরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনকে মুক্ত হস্তে সাহায্য করতে পারেন। সুতরাং যে প্রান্তেই থাকুন, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করুন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণের সময় স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই সরকারের ত্রাণের দিকে না তাকিয়ে আর্তমানবতার সেবায় সবাই স্বেচ্ছায় যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই যদি এগিয়ে আসেন, তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যত বড়োই হোক না কেন, তার মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে না।
ঢাকা