শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দুগ্ধ উত্পাদন মানেই কি গাভি ও খামারিরসংখ্যা বৃদ্ধি?

আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪৩

মো. শরিফুল ইসলাম

 

১০টি গাভি থেকে দৈনিক ৫ কেজি করে মোট ৫০ কেজি দুধ পেতে পারি। আবার পাঁচটি গাভি থেকে দৈনিক ১০ কেজি করে মোট ৫০ কেজি দুধ পেতে পারি। আমরা কোনটাকে অধিক গুরুত্ব দেব? প্রশ্নটি অনেক সহজ কিন্তু এর উত্তর ও বিশ্লেষণ অনেক বিশদ।

আমরা যদি অল্প সংখ্যক গাভি থেকে অধিক পরিমাণ দুধ পেতে পারি তবে কেন আমরা অধিক সংখ্যায় গাভি লালনপালন করব? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দুধ উত্পাদন নিয়ে একটি আশার জায়গায় যাচ্ছি, কিন্তু সেইসঙ্গে বাংলাদেশে খামারি ও গাভির সংখ্যাও বাড়ছে—সেটি অপ্রত্যাশিত। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত গাভির সংখ্যা না বাড়িয়ে গাভিপ্রতি দুগ্ধ উত্পাদন বাড়ানো।

ডেইরি ফার্মিং মিথেন নিঃসরণের একটি উল্লেখযোগ্য উত্স। বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী এই মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে সারা পৃথিবীতেই গবেষণা চলছে। সকল অর্থনৈতিক সেক্টর থেকেই অল্প পরিমাণে হলেও মিথেন নিঃসরণ হ্রাসের জন্য বিভিন্ন গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। ডেইরি ফার্মিং থেকেও মিথেন নিঃসরণ কমানোর জন্য বহির্বিশ্বে গবেষণা চলমান। আর এই ক্ষেত্রে ডেইরি ফার্মে প্রতিটি গাভির দৈনিক উত্পাদনশীলতা বাড়িয়ে মিথেন নিঃসরণ হ্রাস অন্যতম একটা উপায়। গাভির দৈনিক উত্পাদন বাড়লে কম সংখ্যক গাভি থেকে অধিক পরিমাণ দুগ্ধ উত্পাদন নিশ্চিত করা যাবে। এই নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৮০ থেকে ২০০৬ সালের দুগ্ধ উত্পাদনকারী গাভির সংখ্যা ও দুগ্ধ উত্পাদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এই ২৬ বছরে এ দেশে দুগ্ধ উত্পাদনকারী গাভির সংখ্যা প্রায় ১৭% হ্রাস পেয়েছে—কিন্তু গাভির দৈনিক গড় উত্পাদন বেড়েছে প্রায় ১৫৮%। অপরদিকে দুগ্ধ উত্পাদনকারী মোট খামারির সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৪%, কিন্তু খামারপ্রতি গাভির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩২৫% যা ঐ দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রত্যাশিত ছিল। অর্থাত্ গাভির দৈনিক উত্পাদনশীলতা বাড়লে মোট গাভি কিংবা খামারির সংখ্যাও হ্রাস পেতে পারে, তবে এটা সত্য যে খামারপ্রতি গাভির সংখ্যা বাড়বে। মোট গাভির সংখ্যা কমে গিয়েও খামারপ্রতি গাভির সংখ্যা বাড়লে প্রান্তিক খামারির সংখ্যা কমে যাবে এটা সত্য; কিন্তু টিকে থাকা খামারগুলো আকারে বৃহত্ এবং নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ডেইরিশিল্প একটি বৃহত্ ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হবে। যার ফলে সরকারের পক্ষে খুব সহজেই সামগ্রিক ডেইরি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত করা ও উত্পাদন সংশ্লিষ্ট যে কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে সহজতর। বিক্ষিপ্তভাবে খামার সংখ্যা না বেড়ে প্রতিটি খামারে উত্পাদনশীল গাভির সংখ্যা বাড়ালে দেশের সকল ডেইরি ফার্মকে জাতীয় ডাটাবেইজের আওতায় আনা সহজ হবে। আর এই ধরনের জাতীয় লাইভস্টক প্রোডাকশন ডাটাবেইজ গবেষণার জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ এই শিল্প থেকে কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ নিয়ে বেশ কথা হয়েছে। একজন খামারির ১০ থেকে ১৫টি গাভি থাকে—এগুলোর মধ্যে একটি অসুস্থ থাকা খুবই স্বাভাবিক। সেই অসুস্থ গাভির ক্যামিক্যাল ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হতেই পারে। খামারিকে অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো গাভির দুধ কিছুদিনের জন্য বিক্রি থেকে বিরত থাকতে হবে।

গাভির দৈনিক দুগ্ধ উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার বিষয়। সম্ভাব্য সকল উপায়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণার বিষয় হচ্ছে অ্যানিম্যাল ব্রিডিংয়ের মূলনীতি প্রয়োগ করে দেশের জন্য উপযোগী ব্রিড কৌশল উদ্ভাবন করা। যা দীর্ঘমেয়াদে গাভির দৈনিক গড় উত্পাদন বাড়াবে। সুতরাং বাংলাদেশে শুধু গাভি ও খামারির সংখ্যা না বাড়িয়ে কিভাবে গাভিপ্রতি দুগ্ধ উত্পাদন বাড়ানো যায় তার ওপর গবেষণা চালাতে হবে।

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়, ডেনমার্ক