শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আমাদের নাগরিক দায়িত্ববোধ

আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫৭

দেশপ্রেম শব্দটা যতটা গভীর অর্থবহ, ততটা গভীরতায় তার চর্চা লক্ষ করা যায় না। এ কারণেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও সামাজিক নানান জটিলতা ও পরিবেশ বিপর্যয়ে দেশ নানাভাবে হুমকির মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। ঢাকার যে কোনো অংশে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবনতি, পুরো এলাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হবার পেছনে দায়ী।

সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব এলাকার মানুষকে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। কিন্ত তারপর? নাগরিক হিসেবে কিছুটা দায়িত্ব কি আপনার, আমার আমাদের ওপরও বর্তায় না? অথচ আমরা নাগরিক হিসেবে আসলে কোন দায়িত্ব পালন করি?

সমীক্ষা বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জলাবদ্ধতার পেছনে দায়ী  দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা। অর্থাত্ যে নালা বা ড্রেনগুলো দিয়ে আবর্জনা নিষ্কাশনের কথা, সেগুলোর মুখ আবদ্ধ হয়ে আছে আমাদেরই ফেলা  পলিথিন, প্ল­াস্টিক কিংবা কোনো শক্ত পদার্থে। যার কারণে স্থানে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার, মশাসহ নানান কীটপতঙ্গের জন্ম ও আবাসস্থল হয়ে উঠেছে এগুলো।

আবার আমাদের নিজেদের বর্জ্য, হোক তা গৃহস্থালি বা কারখানার উদ্বৃত্ত, যথাসময়ে যথাস্থানে না ফেলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে নগরবাসীর মাঝে। যেটি শুধু নিজের নয়, চারপাশের এলাকা অপরিচ্ছন্ন, নোংরা করার জন্য যথেষ্ট। চলমান ডেঙ্গু সমস্যার কথাই ধরা যাক। অভিযোগ আছে, সিটি করপোরেশনের ঘোষণা সত্ত্বেও তাদের পরিচালিত অভিযানে নগরবাসীর অসহযোগিতা করার।

ঢাকার রাস্তার অনেক স্থানে যানজটের পেছনে দায়ী সরু অপ্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ। যেহেতু অধিকাংশ বাড়ির মালিকরা রাজধানীর এক টুকরো জমিকে মনে করছেন সোনার হরিণ, সেহেতু নাগরিক কোনো সুবিধা-অসুবিধার কথা ন্যূনতম বিচারে না এনেই সেই জমির সদ্ব্যবহার করছেন। এ কারণে নাগরিক ভোগান্তি চোখে পড়লেও তার প্রতিকার চেয়ে আমরা নিজেরা কখনো সিটি করপোরেশন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হই না। অথচ নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের শুধু দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে না, বরং এটি আমাদের অন্যতম পবিত্র একটি কর্তব্য।

একইভাবে রাস্তার লেন না মানা,  যত্রতত্র পার্কিং এবং রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করা আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক সত্য হলো, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা এই আইনভঙের চর্চা অব্যাহত রাখছি,  যা তাদের সড়ক দুর্ঘটনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে নিয়ত।

মনে রাখতে হবে,  রাষ্ট্র্রের  সম্পদ নষ্ট করা, দেশের অন্য নাগরিকদের অধিকার বঞ্চিত করে তোলা কিংবা নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ও সম্পদের মোহে আত্নকেন্দ্রিক এক অর্থে স্বার্থপর মনোভাবের প্রকাশ সুনাগরিক হবার পথে অন্তরায়। এখন আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে, আসলেই আমরা কী চাই? যেহেতু আমি,  আপনি, আমরা মিলেই একটা দেশ, সেহেতু নাগরিক দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।

ঢাকা