শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য বড়ো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০১৯, ২১:০১

শ্রীধর দত্ত

 

দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেখানে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত, ঠিক সে সময় রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য জটিল হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছে। সরকারি হিসাবে ১৫ লাখ বলা হলেও বেসরকারিভাবে ২০ লাখের কম হবে না। বাংলাদেশ ছোট আয়তনের একটি দেশ। বিশ্বে সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্বের দেশ। তার ওপর বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাড়তি চাপ। মিয়ানমারের অন্য প্রদেশেও মুসলমান রয়েছে, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সেই দেশের সরকারের অভিযোগ নেই। সমস্যা হচ্ছে আরাকান মুসলমান রোহিঙ্গাদের নিয়ে। তাদের কারণে আমাদের দেশের সাফল্য, সম্মান ক্ষুণ্ন্ন হতে দিতে পারি না। আমরা যারা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করি, আমাদের সে দেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হয়। কারণ আমরা প্রবাসী ও আশ্রিত। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীরা কখনো মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ তো দূরের কথা, কল্পনাও করে না। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্টে মধ্যপ্রাচ্যে এসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি ভিসা বন্ধ রয়েছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য একটি বিষফোঁড়া। রোহিঙ্গারা যখন শরণার্থী হয়ে ছেঁড়া জামা-কাপড় পরিহিত, কোলেপিঠে সন্তান নিয়ে খালি হাতে নিঃস্ব অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে এসেছিল, তখন বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে টেকনাফে আশ্রয় দিয়েছিল তাদের। আজ তারা কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়—যত ধরনের অপরাধ আছে, তাদের দ্বারা হয় না এমন কিছু নেই। কিছুদিন আগে স্থানীয় এক যুবলীগ কর্মীকে হত্যা, তার আগে পুলিশের ওপর হামলা, চিকিত্সক হত্যা, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বিদেশি এনজিও কর্মীদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদির কথা বলতে হয়। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের দখলে। তাদের সপর্ধা দেখে অবাক লাগে—গত ২৫ আগস্ট তারা লাখ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে মিটিং করল। বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তত্পরতায় মিয়ানমার সরকার রাজি হয়েছিল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে। প্রথম পর্যায়ে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা এতে রাজি হয়নি। বাংলায় একটা কথা আছে—বসতে দিলে শুতে চায়, শুতে দিলে উঠতে চায় না। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারটা হয়েছে সেইরকম।

যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার লাখ লাখ শরণার্থী পার্শ্ববর্তী তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আশ্রয় দেয়নি। সেই সময় বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল শুধু মানবিক কারণে। এদিকে কিছু এনজিও, ধর্মীয় সংগঠন ও মিয়ানমারের জঙ্গী সংগঠনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রিত, অথচ বলছে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষ। এখন তাদের প্রত্যেকের হাতে বাংলাদেশি সিম ও স্মার্টফোন। আমার মতে, সময় থাকতে সরকার যদি তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গারা বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সফলভাবে সমাধান করেছে, ঠিক সেইভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানও কর হবে বলে আশা করি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত