শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভাওয়ালের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হোক

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:০২

জয়নুল আবেদীন স্বপন

 

বন্যেরা বনে সুন্দর। প্রাকৃতিক নিয়মে বনের সৃষ্টি, তার সৌন্দর্য ওখানেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি ভাওয়ালের বন একদিন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল। লাল মাটির উঁচুভূমির বনে গজারি ছাড়াও ছিল কড়ই, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, শিমুল, সোনালু, জিগা, গাদিলা, নাগেশ্বর, বহেরা, হরিতকি, জারুল, তিতিজাম, বনআমড়া, আনই, অরবড়ই, চিনাডলই, বঙ্কই ও কুটিশলসহ হাজারো প্রজাতির গাছ। প্রাণীদের মধ্যে ইতিমধ্যে বাঘ, হরিণ, বন্যশূকর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই, বনমোরগ, সজারু, খরগোশ, ময়ূর ও শকুনসহ অনেক পাখি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন বানর, শেয়াল, বনবিড়াল, গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, বেজি ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছাড়া অন্য কিছু তেমন চোখে পড়ে না। খাদ্য সংকটের কারণে বানর এখন লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বাড়ি ও দোকান থেকে সংগ্রহ করছে খাবার। গ্রামের ফলফলাদি ধ্বংস করছে। শেয়াল ও বনবিড়ালগুলো বাড়ি থেকে হাঁস, মুরগি, কবুতর ধরে সাবাড় করছে। খামারের মাছও খাচ্ছে ওরা। বনের কাঠবিড়ালিরা গ্রামে ঢুকে কৃষকের সবজি, কাঁঠাল, আম, পেঁপে ও কচিডাবসহ অনেক ফসল নষ্ট করছে। নির্বিচারে বন কাটার কারণে ভাওয়াল গড়ের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। উন্নয়ন ঘটানোর নামে বন ধ্বংসের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলও নষ্ট হচ্ছে। শত শত বাড়িঘর তৈরি হয়েছে বনের জমিতে। বন ধ্বংস করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে অনেক।

বন্যপ্রাণীদের রক্ষার জন্য আইন থাকলেও আগে আইনের তেমন প্রয়োগ ছিল না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা ভাওয়াল বনে জাল পেতে লাজুক ও নিরিহ প্রাণী খরগোশ শিকার করত। সরকি-বল্লম দিয়ে অবাধে শিকার করত বন্য শূকর। তখন কেউ বন্যপ্রাণী রক্ষা নিয়ে চিন্তা করেনি। বনমোরগ ও ময়ূর অবাধে ধরে নিয়ে যেত মানুষ। এভাবে বিলুপ্ত ঘটেছে অনেক জীবের। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনে পানির বিভিন্ন  উত্স নষ্ট হওয়ায় জীবগুলো বন ছেড়ে পালাচ্ছে। বনের আলু অনেক প্রাণীর খাদ্য। এ আলু তোলায় কোনো নিষেধ না থাকায়  দলে দলে মানুষ আলু তুলে নিচ্ছে। এতে অন্য গাছের চারাও ওঠানো হচ্ছে। আগে ভাওয়াল বনে গজারি ছাড়া অন্য গাছ কাটায় তেমন বাধা ছিল না। গজারি ছাড়া অন্য গাছকে বলা হতো আকাঠা। এই আকাঠার নাম করে কাঠ, ওষধি ও ফলদ গাছগুলো অবাধে কাটা হতো। বন বিভাগ দেখেও দেখত না। বন্যপ্রাণীরা যে ফলমূল খেয়ে বাঁচবে—এ ধারণা নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল আগে থেকেই। প্রতি বছর চৈত্র মাসে কে বা কারা বনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে লতা-গুল্ম, ওষধি, বনজ, ফল ও বুনোফুলসহ হাজারো প্রজাতির গাছের চারা ধ্বংস হয়। প্রাণীদের বাসস্থান নষ্ট হয়। যার ক্ষতি হিসাব করে বলা যাবে না। পরিবেশ দূষণ করছে কলকারখানার ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি। বিষাক্ত পানি পান করে বনের অনেক জীবের মৃত্যু ঘটছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকৃতিক ভারসাম্য ধরে রাখার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ধ্বংস হওয়া বনকে উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে।

গাজীপুর