শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিজারিয়ানের পরবর্তী পদক্ষেপ

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:১৩

সাদিয়া সারতাজ

 

বাংলাদেশে এখন যে প্রথা চালু হয়েছে তার ব্যতিক্রম না ঘটিয়ে অনেকেই সিজারিয়ানের পথে হাঁটেন। সিজারিয়ান বা সি-সেকশন একটি মেজর অপারেশন, এক্ষেত্রে তলপেটের চামড়াসহ সাতটি স্তর কাটা হয়। আশঙ্কাজনক হারে বাংলাদেশের ধনী-দরিদ্র সকল পরিবার সিজারিয়ানকে মাইনর সার্জারি হিসেবে গণ্য করে। ফলে প্রসূতি মায়ের যতোটা যত্নের প্রয়োজন তার সিকি ভাগও পূরণ হয় না। নরমাল ডেলিভারিতে একজন প্রসূতি মায়ের যেখানে ৫০০ মিলিলিটার রক্তক্ষরণ হয়, সিজারিয়ানে হয় ১০০০ মিলিলিটার। উপরন্তু শরীরের একটি বড় অংশ কাটা হয়, অসাবধানতার দরুন ইনফেকশানের ঝুঁকি থেকে যায়। দ্বিগুণ পরিমাণ রক্তক্ষরণের ফলে প্রচুর পানি, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীর থেকে নির্গত হয়। এই ঘাটতি পুনরুদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা অধিকাংশ পরিবারেই গ্রহণ করা হয় না। যে কোনো পোস্ট-অপারেটিভে পেসেন্টকে যে পরিমাণ বিশ্রাম এবং বিশেষ ডায়েটারি কেয়ার দেওয়া হয় তার হয়তো অল্প কিছু সিজারিয়ান মা তিনদিন হাসপাতালে পান। এরপর থেকে ঘুমের ব্যাঘাত নিয়ে এক হাতে শিশুটির সকল পরিচর্যা করতে হয়, অনেকক্ষেত্রে শিশুর পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজেও নিয়োজিত হতে হয়।

তিনদিন হাসপাতালে থেকেই কি মা সুস্থ হয়ে যান? উত্তর হচ্ছে—না। রক্তক্ষরণ, প্যাথেড্রিনের প্রভাব এবং অপারেশনের দরুন মা ক্লান্ত এবং অবসন্ন হয়ে পড়েন। এ সময় মায়ের প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, যা তিনি দিনেরাতে যে কোনো সময় পুরো করে নেবেন, শিশু যখন ঘুমোবে মাও ঘুমিয়ে নেবেন, কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা। এ সময় রক্তক্ষরণের পর শরীরে যাতে পানি শূন্যতা না ঘটে সেটা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। যাঁরা ব্রেস্ট ফ্রিডিং করান তাঁরা হয়তো পর্যাপ্ত পানি পান করেন, বাকিরা এই বিষয়টি খেয়ালই করেন না। এ সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ লিটার পানি পান করতে হবে। অপারেশনের ক্ষত থেকে যে টিস্যু ক্ষয় হয় তা পুনরুদ্ধারের জন্য মুরগি বা কবুতরের মাংসের স্যুপ খুব ভালো কাজ করে। ভিটামিন এবং খনিজ বিশেষ করে পটাসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের ঘাটতি দূর করার জন্য লাউ, কাঁচা পেঁপের স্যুপ বা ঝোল এবং মৌসুমি ফল খেতে হবে। ইনফেকশান থেকে বাঁচতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, প্রতিদিন গোসল করা এবং পোশাক বদল, ক্ষত শুকানো পর্যন্ত কাটা জায়গায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চার ওজনের সমপরিমাণ ওজন তুলতে পারবেন, এর বেশি না। কিছু কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলে মাংসপেশির টান দূর হবে।

প্রসব পরবর্তী সময়ে ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লি­মেন্টগুলো চালিয়ে যেতে হবে ৩ থেকে ৬ মাসের জন্য। গর্ভকালীন জটিলতাসমূহ যেমন উচ্চরক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজম, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিক, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাব, মাংসপেশি এবং কোমরে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পুরোপুরি রেহাই পেতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি; নচেত্ এসব শারীরিক জটিলতা আমরণ পিছু ছাড়বে না। সর্বোপরি মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। অনেকক্ষেত্রেই প্রসূতি পরবর্তী ডিপ্রেশন দেখা দেয়। সন্তানের বাবাকে কাজের পাশাপাশি সন্তান লালনে মাকে সাহায্য করতে হবে।

পুষ্টিবিদ, ঢাকা