বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

খেলাপি ঋণ বাড়েনি সিস্টেমের কারণে অনেক ঋণখেলাপি

আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:৩২

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে বলেছেন, দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি। আমাদের সিস্টেমের কারণে অনেক ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। তারপরেও খেলাপি ঋণ থাকা উচিত নয়। এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। তাই যতটুকু পারি, সে ব্যবস্থা নেব। কারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে পারি না। গতকাল বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১৯৯১ সালে আমাদের মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। শতাংশ হারে এটা হয় ২৬ দশমিক ১৪। বর্তমানে ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণ আছে। এরমধ্যে খেলাপি ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। শতাংশ হারে ১১ দশমিক ৯৬। এই হিসাবে বলব, আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সিম্পল সুদের হারের থেকে কম্পাউন্ড হার হওয়ার কারণে সুদের হার অনেক বেশি আসে। এসব কারণে ১০ শতাংশের সুদ কখনো কখনো ১৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। এজন্য আমরা সুদের পরিমাণ, কস্ট ফান্ডসহ সবই নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যেই ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পারব।

আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে খেলাপি ঋণগ্রাহকদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরো জানান, ১০০ কোটি বা এর বেশি শ্রেণিকৃত ঋণের হিসাবগুলো নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করার জন্য তপশিলি ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি তপশিলি ব্যাংকে ঝুঁকিব্যবস্থাপনা ইউনিট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, বিদেশে অর্থপাচার রোধে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়েও আনা হয়েছে। বর্তমানে অর্থপাচারবিষয়ক ৪০টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। বিএনপির রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ঘটনা। বিদ্যমান বিও অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে সব বিনিয়োগকারী একই সঙ্গে লেনদেন করেন না। কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারী দীর্ঘ বিরতির পর বিনিয়োগ করে থাকেন। রুমিন ফারহানার প্রশ্ন ছিল, পুঁজিবাজারে ৩৩ লাখ বিও অ্যাকাউন্টধারীর মধ্যে সক্রিয় মাত্র ১৩ লাখ, যার অর্থ ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৩ হাজার ৪৩৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আওয়ামী লীগের হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে লিকুইড মানির  কোনো সংকট নেই। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তপশিলি ব্যাংকগুলোর আবশ্যকীয় নগদ জমা সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর জমা ছিল ৭২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। জাপার কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যে কর আদায়ে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হবে। এর মাধ্যমে কর আদায়ে ত্রুটিবিচ্যুতি কমে যাবে।