শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বন্ধুপ্রতিম ভারত আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করবে না বলে বাংলাদেশ আশা করে ----------------------- পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:২৫

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ আশা করে বন্ধুপ্রতিম ভারত এমন কিছু করবে না যাতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বরং পরস্পর বন্ধুত্বের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ও ভারত এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করে। আসামের পর ভারত জুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) করার উদ্যোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় জাদুঘরে ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার প্রধানদের অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। আগামীতে এই সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সরকার এবং ভারতীয়দের বহুমাত্রিক অবদানের বিস্তারিত আলোচনা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্য শহিদ হয়েছেন এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ভারতীয় অনেক সেনা পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ১২ ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের পরিবারের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১৫৮২ জন শহিদ ভারতীয় সেনা সদস্যদেরকেও সম্মাননা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ৩৮০ জন শহিদ ভারতীয় সেনা সদস্যের জন্য সম্মাননা স্মারক প্রস্তুত করেছে, যা শিগিগরই ভারতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শুরু থেকেই উভয় দেশ অভিন্ন ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কের শক্তিশালী বীজ বপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় দুই দেশের বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও বোঝাপড়া এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ়। তিনি জানান, আগামী বছর মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও বাংলাদেশ সফর করবেন।

হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, একাত্তরে ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সেটা সময়ের পরীক্ষায় সব সময় উত্তীর্ণ হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ‘অনেক ভালো’। আমাদের কাছে প্রতিবেশী প্রথম এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ সবার আগে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। অন্যদের মধ্যে মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অধিকারকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, আরমা দত্ত এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।