চূড়ন্ত হিসাবে গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রাথমিক হিসাবে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিডিপির আকার বাড়লেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলারে স্থির রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সাধারণত অর্থবছর শেষে নতুন বাজেটের আগে প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক হিসাব দেওয়ার পর ছয় মাস পর চূড়ান্ত হিসাব দেয় বিবিএস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, মাথাপিছু আয় সাময়িক হিসেবে ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা যা চূড়ান্ত হিসেবে হবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা। তবে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলারে স্থির রয়েছে। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা কিছুটা মান হারানোর কারণে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টাকার অংকে মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
সাময়িক হিসাবের চেয়ে চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার বেশি হওয়ার বিষয়ে বিবিএস জানিয়েছে, চূড়ান্ত হিসাবে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, নির্মাণ, যানবাহন ও যোগাযোগ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চূড়ান্ত হিসাবে মত্স্য, খনিজ সম্পদ, বৃহত্ ও মাঝারি শিল্প, বিদ্যুত্ ও গ্যাস সরবরাহ, আর্থিক ও জনপ্রশাসন খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। সাময়িক হিসাবে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫১ যা চূড়ান্ত হিসাবে হয়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্প খাতে সাময়িক হিসাবে ১৩ দশমিক শুন্য ২ ভাগ থেকে কমে চূড়ান্ত হিসাবে ১২ দশমিক ৬৭ হয়েছে। সেবা খাতে সাড়ে ৬ ভাগ থেকে চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৭৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রবৃদ্ধির জন্য ভিত্তিবছর ধরা হয়েছে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে। সবমিলিয়ে চলতি হিসাবে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। মূলত একটি দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের তুলনায় (ভিত্তিবছর) কী পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা উত্পাদিত হলো তার বাজারমূল্যকে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) বোঝায়। বাংলাদেশে ব্যয় পদ্ধতিতে এই হিসাব করে বিবিএস।
প্রতিবেদন অনুযায়ী জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ ও দেশজ সঞ্চয়ের হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৫৭ ভাগ ও ২৪ দশকি ৭৫ ভাগ। সাময়িক হিসাবে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩১ দশমিক ৫৬ ভাগ ও ২৩ দশমিক ৯৩ ভাগ।
একনেকে সাত প্রকল্প অনুমোদন
গতকালের একনেক সভায় মোট সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা খরচ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সভায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (১ম পর্যায়) ১ম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১৩ হাাজার ৬১০ কোটি টাকা। এখন ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে গতকাল ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় এর সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
সভায় ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের ৩য় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলার রামু- ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ হাসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়ক এর কুষ্টিয়া শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নাগেশ্বরী-কাশিপুর-ফুলবাড়ী-কুলাঘাট-লালমনিরহাট জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৮৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা, মাদারীপুর ও রংপুর জেলার ৩টি কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।