শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

একশনএইডের জরিপ

রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের ৫৭ শতাংশ এখনো বেকার

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:২২

আট বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৫৭ শতাংশ এখনো বেকার। ৪৩ শতাংশ কাজের মধ্যে থাকলেও বেশির ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। ফলে তাদের আয়ও কম। গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এই দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে। বেসরকারি সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি দিবস সামনে রেখে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৯২ শতাংশ জানিয়েছেন, করোনাকালে তারা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি।

এতে আরো বলা হয়, আহত শ্রমিকেরা মূলত শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি এবং তারা এখনো সুস্থ শ্রমিকদের ন্যায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে কারখানার মালিকরা তাদের কাজে নিতে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন। এসব শ্রমিকের জন্য সরকারের তরফে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না থাকা কিংবা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিমা কিংবা অন্য কোনো সুবিধা না থাকায় তাদের পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া ঐ দুর্ঘটনার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার।

আহত শ্রমিকদের মধ্যে ২০০ জনের ওপর ঐ জরিপকাজ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা যায়, প্রাণে বেঁচে গেলেও রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিকই আগের চেয়েও দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। এখনো ১৪ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্য অবনতির দিকে রয়েছে। ৫৮ দশমিক ৫  শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্য আগের মতোই  (উন্নতি হয়নি) আর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ সমপূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে। ১৪ শতাংশ  শ্রমিকের মধ্যে বেশির ভাগই বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে  জীবনযাপন করছেন বলে একশনএইডের জরিপে উঠে এসেছে। অন্যদিকে সাড়ে ১২ শতাংশ শ্রমিক এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন, যা গত বছর ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির অষ্টম বার্ষিকীতে ‘কোভিভ-১৯ :চ্যালেঞ্জেস ফর দ্য রানা  প্লাজা ট্র্যাজেডি সার্ভাইভার্স’ ভার্চুয়াল  সংলাপে এ জরিপ ফলাফল তুলে ধরে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকে কাজে ফিরলেও ঘোরাতে পারেননি ভাগ্যের চাকা। জীবন ধারণের তাগিদে অনেকে আবার বদলেছেন কাজের  ধরন। তার ওপর করোনা মহামারি তাদের জীবনকে আরো কঠিন করেছে। বেশির ভাগ পরিবারেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এক জন, তার ওপর করোনার প্রভাবে হ্রাস পেয়েছে উপার্জন। তাদের আয়ের চিত্রের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, এসব কাজ করে সাড়ে ১০ শতাংশ শ্রমিক ৫ হাজার ৩০০ টাকার নিচে আয় করেন। সাড়ে ৩৭ শতাংশ শ্রমিক আয় করেন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার  ৩০০ টাকা। সাড়ে ২৯ শতাংশ লোকের আয় ১০ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩০০ টাকার  মধ্যে। প্রায় ১০ শতাংশ শ্রমিকের কোনো আয় নেই। অথচ এসব পরিবারে খাদ্য, বাড়িভাড়া, চিকিত্সা, সন্তানের পড়াশোনাসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়। 

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, আট বছরেও  এত বিশালসংখ্যক শ্রমিকের এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ এদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের  অক্সিজেন বলা হয় শ্রমিকদের। ঔপনিবেশিক মনমানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে হবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা আট বছরেও রানা প্লাজার ঘটনার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। আলোচিত এই মামলা কেন দ্রুত বিচার আইনে করা হলো না, সে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ।

সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার শ্রমিকদের নিরাপত্তায় ট্রেড ইউনিয়ন, সরকার ও মালিকপক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোনো টালবাহানা চলবে না। এছাড়া ক্ষতিপূরণের স্বচ্ছ আইন করা, স্বাস্থ্যবিমা করা, রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করা, যারা কাজ হারিয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে সঠিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।