লিওনেল মেসি চার বছর পর বিশ্বসেরার মঞ্চে ফিরলেন, যথাক্রমে ১২ আর ১৪ বছর পর ব্রাজিল লিভারপুল ফিরে পেল মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। সদ্যসমাপ্ত বছরটাকে তাই অনায়াসেই ‘প্রত্যাবর্তনের বছর’ আখ্যা দিয়েই দেওয়া যায়।
পাগলাটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুলের শ্রেষ্ঠত্ব
বছরের শুরুর অর্ধটা পেয়েছে ইতিহাসেরই অন্যতম এক স্মরণীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরের দেখা। নকআউট পর্বে প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়েও পরের রাউন্ডে ওঠার সাত-সাতটা নজির দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। দ্বিতীয় রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে নিজেদের মাঠে ২-১ গোলে হেরেও ফিরতি লেগে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৪-১ ব্যবধানের দুর্দান্ত জয় নিয়ে আয়াক্স আমস্টারডাম চলে যায় পরের পর্বে। একই পর্বে জুভেন্তাস অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে প্রথম লেগে দুই গোলে হারলেও পরের লেগে ৩-০ গোলের জয় নিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে। পোর্তো-রোমা লড়াইয়েও শুরুর লেগে পিছিয়ে পড়ে পরের পর্বে ওঠে পোর্তো।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম লেগে জয় পেলেও পরের লেগে হেরে আবারও দ্বিতীয় রাউন্ডে পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রা শেষ হয়। আয়াক্স কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্তাসের বিপক্ষেও জয় পায় একই ঢংয়ে। আর সেমিফাইনালে সে প্রত্যাবর্তনেরই খড়গে কাটা পড়ে ক্লাবটির ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের যাত্রা। তাদের হারিয়ে টটেনহ্যাম ওঠে প্রথমবারের মতো ফাইনালে।
গেল আসরের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রত্যাবর্তনটা কপাল পুড়িয়েছে বার্সেলোনার। লিভারপুলের বিপক্ষে প্রথম লেগে তিন গোলে এগিয়েও পরের লেগে ৪-০ ব্যবধানে হার দলটির ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য লিওনেল মেসিদের অপেক্ষাটা অন্তত আরো এক বছরের জন্য বাড়ায়। ফাইনালে টটেনহ্যামকে ২-০ গোলে হারিয়ে ১৪ বছরের ইউরোপীয় শিরোপা খরা কাটায় লিভারপুল।
ক্লপের অধীনে প্রথম শিরোপাটি চলতি মৌসুমে আরো দুটি শিরোপা জয়ের দুয়ার খুলে দেয় অল রেডদের সামনে। এরপর ইউরোপীয় সুপারকাপে চেলসি ও ক্লাব বিশ্বকাপে ফ্ল্যামেঙ্গোকে হারিয়ে শিরোপা জেতে ক্লপের শিষ্যরা।
দক্ষিণ আমেরিকার সেরা ব্রাজিল
ব্রাজিল শেষ কোপা আমেরিকা জেতার পরে কেটে গিয়েছিল ১২টি বছর আর তিনটি আসর। তারপর থেকে শেষ আটের বাধাই পেরোতে পারেনি সেলেসাওরা। তার উপর এবার চোটের কারণে ছিলেন না প্রজন্মের সেরা তারকা নেইমার। তবে সেটা ফেলিপে কোটিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসাসদের শিরোপা জয়ে খুব একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। পুরো প্রতিযোগিতায় অপরাজিত থেকেই শিরোপা ছুঁয়েছে কোচ তিতের শিষ্যরা।
ইউরোপীয় লিগে পুরোনোদেরই দাপট
ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে আগের বছরের চ্যাম্পিয়নরাই শিরোপা ধরে রেখেছে এ বছর। বায়ার্ন মিউনিখ আর ম্যানচেস্টার সিটি অবশ্য বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কাছ থেকে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাই ‘উপহার’ পেয়েছিল। এছাড়া বার্সেলোনা, জুভেন্তাস ও পিএসজির শিরোপা ধরে রাখতে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি ২০১৮-১৯ মৌসুমে।
প্রথম নেশন্স লিগ রোনালদোর
প্রথমবারের মতো আয়োজিত উয়েফা নেশন্স লিগ জিতে চলতি বছরে আরো একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
সেরার মঞ্চে মেসির ফেরা
ফি-বছর গোটা পঞ্চাশেক গোল করা কোনো ব্যাপারই না লিওনেল মেসির। শেষ হতে যাওয়া ২০১৯-এ নবম বারের মতো বছরে ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তার এমন নৈপুণ্যে বার্সেলোনা লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে এক মাস হাতে রেখেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ ১২ গোল করে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন শেষ চারেও। এ কৃতিত্ব ভার্জিল ফন ডাইক আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে চার বছর পর আবারও বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি অরের সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে মেসির হাতে।
না ফেরার দেশে সালা-রেয়েস
এতো সব ফেরার বছরের শুরুটা হয়েছিল এক তরুণ ফুটবলার এমেলিয়ানো সালা’র অকালে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। নঁতে থেকে নতুন ক্লাব কার্ডিফ সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠা এই তরুণ ফরোয়ার্ড ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তার। গেল দশকে অপ্রতিরোধ্য আর্সেনালের অন্যতম সদস্য হোসে অ্যান্তোনিও রেয়েসকেও এ বছরই হারিয়েছে ফুটবল বিশ্ব। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন স্প্যানিশ এই ফুটবলার।