বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বুরুন্ডিকে উড়িয়ে আবার ফিলিস্তিন চ্যাম্পিয়ন

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ২১:২১

 সোহেল সারোয়ার

ফাইনালে ফিলিস্তিনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন সুযোগ পায়নি বুরুন্ডি। বরং বুরুন্ডিকে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে কুপোকাত করে দিয়েছে ফিলিস্তিন। ফাইনালে ফিলিস্তিন ৩-১ গোলে বুরুন্ডিকে হারিয়ে এবার ষষ্ঠ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ফিলিস্তিন এ নিয়ে দুই বার ট্রফি জিতল। টুর্নামেন্টের পঞ্চম আসরেও শিরোপা জয় করেছিল ফিলিস্তিন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রফি তুলে দেন চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের হাতে। গোল্ডেন বুট এবং গোল্ডেন বল পেয়েছেন বুরুন্ডির প্লেমেকার এনসিমিরিমানা জসপিন। ৭ গোল করেছেন তিনি। সেরা গোলকিপার ফিলিস্তিনের তৌফিক আবু হামাদ। একই দলের অধিনায়ক মারাবাহ ফাইনালের সেরা পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সোনালি রঙের ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন ফিলিস্তিন ফুটবলাররা। তাদের আনন্দ উল্লাস অন্যরকম এক মাত্রা এনে দেয়। নিজেদের ভাষায় মন খুলে বলাবলি করছিলেন,  বোঝা না গেলেও এইটুকু অনুমান করা যায় ট্রফির আনন্দ দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে।

তাদের জীবনে আনন্দ-উল্লাস আসে খুব কম, অর্জন করে নিতে হয়। সেই অর্জনের মুহূর্তগুলো মুঠোফোনে ধরে রাখতে ট্রফি নিয়ে একজন একজন করে ছবি তুললেন মাঠে গিয়ে। তখনো বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট জ্বলছিল। প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেও ফিলিস্তিন ফুটবলারদের দেখার জন্য অনেক দর্শক গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে।

কথা বলতে চাইলে অনেক ফিলিস্তিনের কণ্ঠে দুঃখের কথাগুলো উঠে আসে। জীবনের নানা সময়ে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাময় ঘটনার কথা তাদের মধ্যে আনমনে ভেসে ওঠে। তাই হয়তো কখনো আনন্দে চোখে জল আসে, আবার দুঃখেও চোখের কোনা ভিজে আসে। কালকের ফিলিস্তিন ফুটবলারদের চোখ ভিজেছে শিরোপা জয়ের আনন্দে। সব সময় এমন আনন্দ পাওয়া যায় না।

ফিলিস্তিনিদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে অজানা আশঙ্কায়। গোলাবারুদের গন্ধে যাদের জীবন কাটে, তাদের সামনে ফুটবল যুদ্ধটা কোনো যুদ্ধই নয়। যারা জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলাফেরা করেন। তাদের সামনে জীবনের সবচেয়ে বড়ো বিনোদন ফুটবল।

ফিলিস্তিন অধিনায়ক সামেহ মারাবাকে বিনা কারণে ৪৫ দিন বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কারো সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এখনো নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করেন, কী অপরাধ ছিল আমার। আমি তো কোনো দিনই ভাবিনি আবার আলোর মুখ দেখব। আবার ফুটবল খেলতে পারব। এখন পৃথিবীর কোথাও খেলতে গেলে আমার কাছে মনে হয় আমি যেন মুক্ত পাখি। শুধু আমিই না আমার দলের অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে পারিবারিক জীবনে।

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে বুরুন্ডিকে দেখেছিল দর্শক, কোথায় গেল সেই তাদের সেই ঝাঁজ। ফাইনালে চেনাই গেল না দুর্বল বুরুন্ডিকে। মাঠে নেমে নড়েচড়ে বসার আগেই গোল হজম করে আফ্রিকান ফুটবল দল বুরুন্ডি।

বুরুন্ডি ২৬ মিনিটেই তিন গোল হজম করে। গোল নিয়েও স্টেডিয়ামে বিতর্ক ছড়িয়েছিল। বুরুন্ডি বাংলাদেশি রেফারি মিজানুর রহমানের নেতিবাচক রেফারিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন। বারবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছিলেন বুরুন্ডির ফুটবলাররা। একটা সময় পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল, মিজান বুরুন্ডির সাইড লাইনের একজন ফুটবলারকে হলুদকার্ড দেখিয়ে সতর্ক করলেন।

রেফারির দুর্বলতায় ফিলিস্তিন এবং বুরুন্ডির ফুটবলারদের মধ্যে কয়েক বার হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল প্রায়। কার্ড দেখিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তৃতীয় মিনিটেই ফিলিস্তিনের খালিদ সেলিম গোল করেন ১-০। ১০ মিনিটে অধিনায়ক সামেহ মারাবাহ গোল করেন ২-০। ২৬ মিনিটে লেইথ খারব গোল করেন ৩-০। শেষ দুটি গোলকে অফসাইড দাবি করেছিল বুরুন্ডি। তিন গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ফিলিস্তিন নিজেদের শক্তি কমিয়ে আনে। সেই সুযোগে ৬০ মিনিটে বুরুন্ডির এনডিকুমানা আসমান গোল করেন ১-৩।