শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঢাকার শ্বাসরুদ্ধকর জয়

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০৬

স্পোর্টস রিপোর্টার

বিশাল সবুজ গালিচার মাঝে এক চিলতে জায়গা, ২২ গজ। প্রতিনিয়ত এখানে কত হাজারো চিত্রনাট্য মঞ্চস্থ হয়। কত নায়কের জন্ম হয়। আনকোরা চরিত্রও সবাইকে চমকে দিয়ে পাদ প্রদীপের আলোয় চলে আসেন।

গতকাল ঢাকা ডায়নামাইটস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচের চিত্রনাট্য শেরেবাংলার ২৫ হাজার দর্শককে ক্রিকেটীয় বিনোদন, বিস্ময়ের সবকিছুই উপহার দিয়েছে।

কী ছিল না এই ম্যাচে! ক্রিস গেইল-হযরতউল্লাহ জাজাইরা চুপসে গেলেও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছিল কাইরন পোলার্ড-রাইলি রুশোর ব্যাট। দুই ক্যারিবিয়ানের (আন্দ্রে রাসেল-পোলার্ড) অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টায় ধরা ক্যাচে সাজঘরে ফিরেছিলেন আরেক ক্যারিবিয়ান (গেইল)। ম্যাচের অন্তিমে ছিল শ্বাসরোধী উত্তেজনা। স্নায়ুক্ষয়ী শেষ ওভারে রংপুরকে ২ রানে হারিয়ে নাটকীয় ম্যাচ জিতেছিল ঢাকা।

তবে এতসব বর্ণনার মাঝেও ম্যাচের মূল আকর্ষণ অনুপস্থিত। গতকাল ঢাকা-রংপুর সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন এক অচেনা তরুণ। ঢাকার জয়ের নায়ক অফস্পিনার আলিস আল ইসলাম। নেট বোলার থেকে ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের নজরে পড়ে গতকাল একাদশে সুযোগ পান আলিস।

তারপরের টুকু ইতিহাস। গতকাল শেরেবাংলার সবুজ জমিনে স্বপ্নীল সময় কাটিয়েছেন সাভারের বলিয়ারপুরের এই তরুণ। বিপিএলের অভিষেক ম্যাচ। অষ্টম ওভারে এক বলের ব্যবধানে দুবার মিঠুনের ক্যাচ ফেলেছিলেন। তার আগের ওভারে নিজে ৬ রান দিয়েছিলেন। ১৬তম ওভারে এসে ভেঙেছেন রাইলি রুশো-মিঠুনের ১২১ রানের জুটি। রুশো স্ট্যাম্পড হন। নিজের পরের ওভারে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের চিত্রনাট্যই বদলে দেন আলিস। মিঠুন, মাশরাফি এবং ফরহাদ রেজা তার শিকার হন। সেখানেই শেষ নয়। পেন্ডুলামের মতো দুলতে ম্যাচের বিষম চাপের শেষ ওভারটি করতে আসেন আলিস।

৬ বলে ১৪ রান দরকার তখন রংপুরের। প্রথম দুই বলেই দুটি চার মেরে বসেন শফিউল ইসলাম। উল্টো ম্যাচ হেলে পড়ে রংপুরের দিকে। তৃতীয় বলে ১ রান। চতুর্থ বল ডট। পঞ্চম বলে ১ রান নেন নাজমুল ইসলাম অপু। যদিও ২ রান নেয়ার সুযোগ ছিল। শফিউল রাজি হননি। শেষ বলে দরকার ছিল ৪ রান। আলিসের শেষ বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি শফিউল।

রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ জিতলো ঢাকা। বলতে হবে আনকোরা আলিস জেতালেন শক্তিধর সাকিব বাহিনীকে। ২৬ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও তিনি। বিপিএল ও গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার টি-২০ ইতিহাসে অভিষেকেই প্রথমবার বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের অনন্য রেকর্ড গড়েন আলিস।

যদিও বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে বিপিএলের ড্রাফটে নাম ছিল না আলিসের। বিপিএল শুরুর তিন দিন আগে দলগুলোকে চিঠিতে জানানো হয়, সবাই একজন করে ড্রাফটের বাইরে থেকে ক্রিকেটার নিতে পারবে। সেই সুযোগেই আলিসকে দলভুক্ত করেছিল ঢাকা। গতকাল যার বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

ঢাকার দেয়া ১৮৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৫ রানেই গেইল, মেহেদী মারুফের উইকেট হারিয়েছিল রংপুর। রুশো-মিঠুনের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পায় দলটি। কিন্তু এই জুটি ভাঙতেই খাদের কিনারে চলে যায় মাশরাফি বাহিনী। হঠাত্ বিপর্যয়ে ম্যাচই হেরে যায় রংপুর। রুশো ৪৪ বলে ৮৩ রান (৮ চার, ৪ ছয়), মিঠুন ৪৯ রান করেন। নয় উইকেটে ১৮১ রানে থামে রংপুরের ইনিংস। ঢাকার নারিন দুটি, শুভাগত, সাকিব, আন্দ্রে রাসেল একটি করে উইকেট পান।

এর আগে পোলার্ডের বিস্ফোরক ইনিংসে ৯ উইকেটে ১৮৩ রান করেছিল ঢাকা। ৬৪ রানে চার উইকেট হারানো ঢাকাকে পথ দেখায় সাকিব ও পোলার্ডের ৭৮ রানের জুটি। পোলার্ড ২৬ বলে ৬২ রান (৫ চার, ৪ ছয়), সাকিব ৩৬, আন্দ্রে রাসেল ২৩, রনি তালুকদার ১৮ রান করেন। রংপুরের পক্ষে শফিউল তিনটি, সোহাগ গাজী, বিনি হাওয়েল দুটি করে, মাশরাফি-ফরহাদ রেজা একটি করে উইকেট পান।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৮৩/৯

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮১/৯

ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ২ রানে জয়ী