বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সৌম্য সরকারের মহাকাব্য

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ২০:২৯

মহাকাব্যে সৌম্য

রান ২০৮*

বল ১৫৩

চার ১৪

ছয় ১৬

g  দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

এখানেই ক্রিকেট শিখেছেন, এখানেই বড় হয়েছেন। বিকেএসপিকে অনায়াসে সৌম্য সরকারের ‘হোম গ্রাউন্ড’ বলে দাবি করা যায়। সেই ঘরের মাঠেই আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ফর্মে ফিরেছেন। তবে আসল ভেল্কিটা শেষ ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচে আবাহনীর জয়ের বিকল্প ছিল না। সেই দলের সামনে ৩১৭ রানের পাহাড় তুলে দিয়েছিল শেখ জামাল। আর এই পাহাড় টপকাতেই মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেললেন সৌম্য সরকার। রেকর্ডের পর রেকর্ড করে তুচ্ছ করে দিলেন সব লক্ষ্য। হয়ে উঠলেন লিস্ট-এ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান এবং এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক। সেই সাথে জহুরুল ইসলাম অমিকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে গড়লেন ৩১২ রানের দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি।

বিশ্বকাপের আগে সৌম্য সরকার জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রস্তুত।

শিরোপা নির্ধারণী এই ম্যাচে ১৫৩ বলে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন সৌম্য। এটা ছিল স্বীকৃত ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এই ফরম্যাটে এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসটার মালিক ছিলেন রকিবুল হাসান। ২০১৭ সালে ১৩৮ বলে ১৯০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রকিবুল।

ডাবল সেঞ্চুরি করার আগে ছক্কার রেকর্ড করে ফেলেন সৌম্য। এই ইনিংসে ১৬টি ছক্কা মেরেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এটা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের লিস্ট-এ ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড। এর আগে ১১টি ছক্কা ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এবার লিগেই আগের রাউন্ডে ১১টি ছক্কা মেরেছিলেন প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের সাইফ হাসান। এছাড়া সৌম্য সরকার ও মাশরাফি বিন মুর্তজারও ছিল ১১টি করে ছক্কা।

১১ ছক্কা বাংলাদেশিদের মধ্যে লিস্ট-এ ক্রিকেটে প্রথম মেরেছিলেন মাশরাফি। ২০১৬ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই। ফতুল্লায় সেদিনও প্রতিপক্ষ ছিল শেখ জামাল। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে ৫০ বলে সেঞ্চুরির পথে মাশরাফি গড়েছিলেন ছক্কার রেকর্ডটি।

গত বছর এই কীর্তিতে মাশরাফির পাশে নাম লেখান সৌম্য। অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে বিকেএসপিতে ১২৭ বলে ১৫৪ রানের ইনিংসে বাঁহাতি ওপেনার ছক্কা মারেন ১১টি।

সৌম্যর এই ব্যাটিং তাণ্ডবের দিনে রেকর্ড হয়েছে জুটিতেও। উদ্বোধনী জুটিতেই সৌম্য ও জহুরুল তুলেছেন ৩১২ রান। প্রথম উইকেটে তো বটেই, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যে কোনো উইকেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি।

উদ্বোধনী জুটিতে আগের রেকর্ড ছিল গত বছর আবাহনীর হয়েই এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর ২৩৬ রান।

সব জুটি মিলিয়ে রেকর্ডটি ছিল এক যুগ পুরানো। ২০০৭ সালে জাতীয় লিগের ওয়ানডে সংস্করণে রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে ২৯০ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহবুবুল করিম ও ধীমান ঘোষ।

সৌম্যর এই ঝড়ের দিনে অনেক কীর্তির সাক্ষী হয়ে রইলো বিকেএসপি। প্রথম পঞ্চাশ রান করেছেন তিনি ৫২ বলে। এরপর গতিটা সময় গেছে আর বাড়িয়েছে। ৭৮ বলে সেঞ্চুরি করেছেন, ১০৪ বলে দেড়শ করেছেন এবং ১৪৯ বলে ছুঁয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছেন শেখ জামালের বোলার তাইজুলের ওপর। তাকেই মেরেছেন ৭টি ছক্কা। ৪টি ছক্কা মেরেছেন মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদিকে।

তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি সৌম্যর এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে কুয়েতের বিপক্ষে ২০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সৌম্য।