বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফিল্ডিংয়ের ঘাটতি ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে

আপডেট : ২৯ জুন ২০১৯, ২১:২১

শামীম হামিদ, বার্মিংহাম (ইংল্যান্ড) থেকে

বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের ঘাটতিটাও বিশ্বকাপে ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। টুর্নামেন্টে যেসব ম্যাচে ফিল্ডিং ভালো হয়েছে সেগুলোতে দল জিতেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান ম্যাচ তার প্রমাণ। এছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং নিয়ে খুবই কোণঠাসা অবস্থায় ছিল দল।

কখনো ফিল্ডারের হাত থেকে ক্যাচ ফসকে গেছে, কখনো সোজা আসা বল ঠিকমতো গ্রিপ করতে পারেননি, বল কখনো বের হয়ে গেছে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে, বলের দিকে ছুটতে দেরি হচ্ছে, বল ধরে ছুঁড়তে গিয়ে কেউ কেউ খেই হারিয়ে ফেলছেন, কে বল ধরবেন তা নিয়ে দু-তিনজন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ছেন, ছোঁড়ার কথা বোলারস প্রান্তে অথচ ছুঁড়ছেন উইকেট কিপারের কাছে। এসব নানারকম দুর্বলতা প্রতিনিয়ত চোখে পড়ছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে ফিল্ডিংয়ের ঘাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ফিল্ডারদের তত্পরতা, বিচক্ষণতা, ক্ষিপ্রতা- এগুলো খুব জরুরি একটা দলের জন্য। ফিল্ডারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে অনেকটা ভূমিকা রাখে। কিন্তু ঐ জায়গাটিতে সুবিধা করতে পারছে না বাংলাদেশ। ফিল্ডারদের শিথিল আচরণের প্রভাব পড়ছে খেলাতেও।  

বাংলাদেশ কেন ফিল্ডিংয়ে ভালো করছে না তার একটা বড় কারণ হতে পারে ইনজুরি। খেলোয়াড়রা প্রায় সবাই ছোটোবড়ো ইনজুরিতে ভুগছেন। দলের নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুরু থেকেই থ্রোয়িং আর্মসে ব্যথা নিয়ে খেলছেন। এছাড়া তামিম, সাকিব, সাইফুদ্দিন, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজুর, মাশরাফিসহ বাকিরা নানারকম অসুবিধায় আছেন। মাশরাফিতো ইনজুরি নিয়ে গত দশটি বছর পার করে দিলেন।    

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়ের দিকেও আঙুল তুলেছিলেন। তার মতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের এত বেশি রান করার পেছনে বোলিংয়ের পাশাপাশি একটি কারণ ছিল ফিল্ডিং। যেসব ম্যাচে ব্যাটসম্যান বা বোলাররা প্রতিপক্ষের সাথে এটে উঠতে পারে না সেখানে ফিল্ডারদের সাহস দেখাতে হয়। ঐসব ম্যাচে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারে একমাত্র ফিল্ডাররা। কিছু চার-ছক্কা বাঁচালেই কিন্তু বোলাররা মনোবল ফিরে পান। কিন্তু দুইটা ম্যাচেই আমরা কয়েকটা চার ঠেকাতে পারিনি। এক রানের জায়গায় দুই রান হয়ে গেছে, দুইয়ের জায়গায় তিন হয়েছে। এ ধরনের ঢিলেমিতে বোলারের মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে।

মাশরাফি আরো বলেন, আমার কাছে মনে হয় অনেক সময় হয়তো ছেলেরা একটু টেনশনে থাকে, নার্ভ ধরে রাখতে পারে না। বলটা কোথায় থ্রো করতে হবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এসব নিয়ে টিম মিটিংয়ে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা সেটা ধারাবাহিকভাবে করতে পারছি না।

ফিল্ডিংয়ে ভালো না করার যুক্তি হিসেবে সাকিবের বিশ্লেষণ খানিকটা অন্যরকম। তার মতে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা ‘অ্যাথলেটিক ফিগারের’ অধিকারী। এটাও আমাদের সাথে তাদের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের ফিল্ডিং যে আশানুরুপ হচ্ছে না তা স্বীকার করে দলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক বলেছেন, অবশ্যই ফিল্ডিং পারফরম্যান্সে উঠানামা ছিল। কোনো কোনো দিন আবার ফিল্ডিং দারুণ ছিল। আমরা এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছি না। বল পিকআপ করার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটু ভালো করতে পারতাম। তবে ছেলেদের মধ্যে কেউ চেষ্টার কমতি করছে না। সবারই নিজস্ব শক্তি-দুর্বলতার জায়গা আছে। ক্যাচিং বা থ্রোয়িং কিংবা গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, একেকজনের একেক জায়গায় উন্নতি দরকার।