মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৩৪ বছর পর সল্ট লেকে বাংলাদেশ-ভারত

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ২০:১৩

সল্ট লেকের স্টেডিয়াম যেন কলকাতার ফুটবল দর্শকের কাছে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়াম। বিশাল জায়গা জুড়ে একটি কমপ্লেক্স। স্টেডিয়ামের চারপাশে চোখ জুড়ানো বাগান। স্টেডিয়ামে ঢুকতে গেলে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মতো দোকানপাট নেই। স্টেডিয়ামের ভেতর দিয়ে গাড়ি চলাচলের দৃষ্টিকটু ব্যবস্থা নেই। সল্ট লেকে ঢুকলে মনে হবে যেন প্রকৃত ক্রীড়াঙ্গন। মনটাকে খেলাধুলায় চাঙা করতে স্টেডিয়ামের পরিবেশ সেভাবেই সাজানো হয়েছে। নানা খেলার ক্রীড়াবিদদের ভাস্কর্য বাগানে বাগানে শোভা পাচ্ছে।

সকালের কড়া রোদের মধ্যে বাংলাদেশের ফুটবলাররা সল্ট লেকের আঙিনায় গড়ে ওঠা দুই নম্বর মাঠে অনুশীলন করছিলেন। ক্লোজড ডোর অনুশীলনের সময় সব সংবাদ মাধ্যমকে সরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ। ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাদিকদেরও সরে যেতে হলো। ইংলিশ কোচ জেমি ডে নিজে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন ভারত বধ করার কৌশল। আর সেটা অনুসরণ করতে গিয়ে মামুনুল, জামাল ভুঁইয়া, রবিউল, গোলকিপার আশরাফুল রানা, ইয়াসিন, জীবন, গোলকিপার সোহেল, রহমত মিয়া, ঘর্মাক্ত সুফিলদের জার্সি থেকে ঘাম ঝরছিল। স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে মূল মাঠে আজ বিকালে অনুশীলন করাবেন জেমি ডে। আগামীকাল এই মাঠে বাংলাদেশ ও ভারত ফুটবল লড়াই। ফিফার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ এটি।

গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে দুই বাংলার কথা এখন সবার মুখে মুখে। সল্ট লেকের মাঠে শেষবার বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। সেবারও এই একই ম্যাচ ছিল সেটি। মেক্সিকো ৮৬  বিশ্বকাপ বাছাই, ভারতের কাছে ২-১ গোলে হার বাংলাদেশের। গোলদাতা আশিষ ভদ্র। এরপর ৮৭ সালে বাংলাদেশ আবারও সল্ট লেকের মাঠে ফুটবল খেলেছিল। বাংলাদেশ ফুটবল দলের ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু জানালেন- তিনি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শেষবার খেলেছিলেন ৮৭ সালে। ভারতের ফুটবল পণ্ডিতদের কথা ৮৫র পর সল্ট লেকের মাঠে ভারত এবং বাংলাদেশ আর মুখোমুখি হয়নি। প্রায় ৩৪ বছর পর আবার ভারত বাংলাদেশ ফুটবল লড়াইয়ে সল্ট লেকের মাঠে নামতে যাচ্ছে। এবারও বিশ্বকাপ বাছাই, কাতার ২০২২।

ভারতের বিপক্ষে একাধিক ফুটবলার খেলেছেন। কিন্তু সল্ট লেকের মাঠে দেশের জার্সি গায়ে এবারই প্রথম বাংলাদেশের ফুটবলারদের অভিষেক হতে যাচ্ছে। কলকাতার ফুটবলে খেলতে গিয়েছিলেন মামুনুল ইসলাম। জামাল ভুঁইয়াও খেলেছেন টুর্নামেন্ট। কিন্তু দেশের জার্সি জড়িয়ে সল্ট লেকের মাঠে কারো পা পড়েনি। সবার চোখে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। কোচ জেমি ডে সবাইকে জানিয়েছেন রোমাঞ্চ ভুলে মাঠে মন দাও। ভালো কিছু করতে পারলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড়ো রোমাঞ্চ। সংবাদ মাধ্যমকে জেমি বলেছেন, ‘ফিফার র্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও ভারত এখন পয়েন্ট টেবিলে আমাদের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট এগিয়ে।’

 মঙ্গলবারের ম্যাচকে ঘিরে দর্শকমহলে উত্সাহের কমতি নেই। কতো দিন বাদে আবার দুই বাংলার ফুটবল বড়ো ময়দানে। জীবনের শেষবিন্দু দিয়ে লড়াই করার তাগিদ ফুটবলারদের ওপর। সবাই তাকিয়ে ম্যাচের দিকে। এইসব নানা কথা কলকাতার টেংরায় টিম হোটেল জে ডব্লিউ ম্যারিয়টের লবিতে পাখা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিন টিম মিটিং হচ্ছে। রুদ্ধদ্বার মিটিং। কোনো কথা বাইরে যাবে না।

হোটেলে সাংবাদিকদের ওপরও কড়া নজর। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ শিবিরে কান পেতে আছে। তথ্য নেওয়ার জন্য তারা মুখিয়ে রয়েছে। ঢাকা থেকে আসা সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে নানাভাবে অন্তরঙ্গতা গড়ে নিয়ে দলের ভেতরের খবর জানতে চাইছে। খেলোয়াড়দের দিকেও ছুটছে। এইসব কারণেই আরো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভারত ফুটবল ম্যাচ কতোটা আগুন ছড়াচ্ছে।