শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৫৪

জান-ই-আলম

দৃশ্যত একটা নিস্তরঙ্গ পরিবেশই বিরাজ করছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ হয়েছে রোববার। গতকাল বিভিন্ন দলের ক্রিকেটাররা তৃতীয় রাউন্ডের জন্য আরেক ভেন্যুতে ভ্রমণ করছেন, কেউবা ঢাকায় ফিরেছেন।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার পরই বদলে যেতে শুরু করে মিরপুর স্টেডিয়াম তথা বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনের চিত্রপট। মিরপুরে জড়ো হতে শুরু করেন একঝাঁক ক্রিকেটার। তার আগেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, একটা সংবাদ সম্মেলন করবেন ক্রিকেটাররা। যেটাকে বিস্ফোরণ বললে ভুল হবে না। দেশের ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দেওয়া সংবাদ সম্মেলনটা বিসিবি একাডেমি মাঠে শুরু হয় বেলা ৩টার পর।

বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ছাড়া জাতীয় দলের ক্রিকেটার, ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত, অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাও ছিলেন। জনা পঞ্চাশেক ক্রিকেটার উপস্থিত হয়ে সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরলেন ১১ দফা দাবি। ১১ জন ক্রিকেটার পৃথকভাবে নিজেদের বক্তব্যে ১১টি দাবির কথা বলেছেন।

সমাপ্তি টেনেছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-২০ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি সাফ জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেটের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন তারা। ভারত সফরের জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর শুরু হতে চলা ক্যাম্প, ২৪ অক্টোবর শুরু হতে চলা জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ডেও অংশ নেবেন না ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে বড়ো ধরনের ধর্মঘট। 

n যেভাবে সংগঠিত হয়েছেন ক্রিকেটাররা :

বিভিন্ন ক্রিকেটারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এমন কিছু করার চিন্তা-ভাবনায় ছিলেন তারা। পরিকল্পনা হলেও সময় মিলছিল না। এবার জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু হওয়ার পরই ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। শীর্ষপর্যায়ে আলোচনা হলেও তরুণ ক্রিকেটাররা কেউ রোববার রাতে, কেউবা গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন সিনিয়রদের কাছ থেকে।

বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগে ক্রিকেটাররা বিসিবির অবহেলার শিকার হয়ে আসছেন বেতন-ভাতা, পারিশ্রমিক নিয়ে। ক্ষোভ দানা বেঁধেছে সময়ের সঙ্গে। গতকাল যার আনুষ্ঠানিক বড়ো বিস্ফোরণ মঞ্চায়িত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার গতকাল বলেছেন, ‘এটা অনেক দিন ধরেই চলছে। আমরা একসাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম। হয়ে উঠছিল না। আজ (গতকাল) এটা করা গেছে। এটা আমরা সবাই মিলে করেছি। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। কেউ একা নয় এখানে।’

জানতে চাইলে তরুণ এক ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি সকালের ফ্লাইটে জাতীয় লিগ খেলে ঢাকায় এসেছি। তারপর এখানে এসেছি। এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। এমন কিছু করার চিন্তা অনেক আগেই ছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি।’

গত বছরের ২৮ মার্চ কোয়াব পুনর্গঠনের দাবিতে মিটিং করেছিলেন প্রায় ৭০ জন ক্রিকেটার। কিন্তু মিটিং ফলপ্রসূ হয়নি। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আগে ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবি নিয়ে বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করেননি। সংবাদমাধ্যমের হাত ধরেই নিজেদের দাবি তুলে ধরেছেন।

n অতীতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট

প্রায় ২০ বছর পর বড়োসড়ো আন্দোলন, ধর্মঘটে দেখা গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বিভিন্ন সময়ে ছোটোখাটো আন্দোলন হলেও শীর্ষ ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে এটি দ্বিতীয়বার বড়ো পদক্ষেপ। ১৯৯৮-৯৯ সালে লিগ খেলার দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে ব্যাট-বল, প্যাড, ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির হয়েছিলেন আকরাম খান, ফারুক আহমেদরা। ২০১৩ সালেও একবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দাবিতে কিছু ক্রিকেটার বিসিবিতে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন। তবে সেখানে জাতীয় দলের শীর্ষ ক্রিকেটাররা ছিলেন না।